ঢাবি শিক্ষক মোনামীর বক্তব্য দাবিতে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও প্রচার

গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) এর বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) এর বক্তব্যের ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে মোনামিকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা আমার পদত্যাগ চাচ্ছো, আমার পরিচয় কি তোমরা জানো না। আমার ছবি দেখোনি কার সাথে। ভলকার তুর্ক আমার সাথে আছে। তোমাদের আমার দরকার নাই।’

এছাড়াও, ভিডিওটিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের সাথে শেহরীন আমিনের একটি ছবিও সংযুক্ত করা হয়।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) এর নামে প্রচারিত  বক্তব্যের ভিডিওটি আসল নয় বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ভুয়া ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। 

ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। 

ভিডিওটির সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে সম্ভাব্য মূল ভিডিওটি ‘Nizamul Islam Saif’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গতকাল (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে পোস্ট হতে দেখা যায়।

Comparison : Rumor Scanner

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, ‘তোমাদের আমার দরকার নাই! | ভিডিওটা যদিও ai দিয়ে করা, কিন্তু কথাগুলো তো বাস্তব তাইনা? Disclaimer: This content is generated by Artificial Intelligence (AI), this video is intended for entertainment, fun and comedy purpose. I did not make this video to demean or disrespect anyone. The characters in this video may resemble real life characters, So don’t take it seriously.’

পাশাপাশি প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে ভয়েস, আইডি কার্ডের লেখায় থাকা ‘স’ অক্ষর ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাতেও খানিকটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয় যা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি কনটেন্টে পরিলক্ষিত হয়।

Screenshot : DeepFake-O-Meter

পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটি এআই ও ডিপফেক কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডিপফেক ও মিটার’ এ যাচাই করলে প্ল্যাটফর্মটির ‘LIPINC’ টুল অনুযায়ী কনটেন্টটি শতভাগ এআই হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়াও, এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘আজকাল’ নামক একটি সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে গত ৯ সেপ্টেম্বরে ‘হামিম তুমি আমাকে খুব ভালো করে চিনো, আমি বায়াসডনেস করছি না: শিক্ষক মোনামী’ ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির শুরুতে শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামীকে বলতে শোনা যায়, ‘হামিম তুমি আমাকে খুব ভালো করে চিনো, আমি বায়াসডনেস করছি না। সকাল থেকে সাংবাদিক ভাইরা দেখছে।’ এসময় শেহরীন আমিন মোনামীর অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায় এবং বুঝা যায় যে প্রকৃতপক্ষে এসময়ে ধারণকৃত দৃশ্যের প্রেক্ষিতে উল্লিখিত এআই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া, অনুসন্ধানে সংবাদমাধ্যম ‘এনপিবি নিউজ’ এর ফেসবুক পেজে গত ৯ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে শেহরীন আমিনকে বলতে শোনা যায়, ‘পদত্যাগ চাচ্ছো, তোমার ধারণাও নেই আমি কে’’। তবে এসময় ভলকার তুর্কের বিষয়ে কিছু বলতে শোনা যায়নি।

উল্লেখ্য, প্রচারিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত শেহরীন আমিনের সাথে ভলকার তুর্কের ছবির বিষয়ে অনুসন্ধানে শেহরীন আমিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মিররড সংস্করণ হিসেবে গত বছরের ৩০ অক্টোবরে ছবিটি পোস্ট হতে দেখা যায়।

সুতরাং, ঢাবি শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী) এর নামে এআই দিয়ে তৈরি বক্তব্যের ভিডিওকে আসল দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img