সম্প্রতি, বাংলাদেশে দুজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী তরুণকে খুঁটির সাথে বেঁধে একজন দাড়ি-টুপিওয়ালা ব্যক্তি বেধড়ক পেটাচ্ছেন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণকে হাত-পা বেঁধে উপুড় করে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে। যাকে ওই দাড়ি-টুপিওয়ালা ব্যক্তি একটি লাঠি দিয়ে পায়ে আঘাত করছেন। এতে আরেকজন ব্যক্তিকে সহযোগিতা করতেও দেখা যায়। ভিডিওটিতে অপর আরেক তরুণকে পাশের একটি খুঁটিতে বেঁধে রাখতে দেখা যায়। এছাড়াও ঘটনাটি ঘিরে কৌতূহলী জনতাকে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় ভিডিওটিতে।

এক্স (সাবেক টুইটার)-এ প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুক প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত বাংলাদেশে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দু ধর্মাবলম্বী তরুণদের মুসলিম ধর্মাবলম্বী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে, বরিশালের বাবুগঞ্জে একটি ওয়ার্কশপ থেকে লোহার পাত চুরির অভিযোগে দুই তরুণকে বেঁধে ওয়ার্কশপ মালিকের মরধরের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়াও মারধরের শিকার দুই তরুণ হিন্দু ধমাবলম্বী নয়, তারা মুসলিম।
আলোচিত দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম Dhaka Mail-এর ওয়েবসাইটে গত ১৬ মার্চ ‘চুরির অভিযোগে দুই যুবককে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, দোকান মালিক আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে ব্যবহৃত ফিচার ইমেজে ব্যবহৃত ছবির সাথে আলোচিত ভিডিওর নির্যাতনের দৃশ্যের হুবহু মিল রয়েছে। অর্থাৎ, প্রতিবেদনটি আলোচিত নির্যাতনের ঘটনা নিয়েই প্রকাশিত। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, নির্যাতনের ঘটনাটি গত ১৬ মার্চ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ব্রিজ এলাকায় ঘটে। দোকান থেকে লোহার পাত চুরির অভিযোগে মিঠুন (২০) ও লিংকন (২৩) নামের ওই দুই তরুণকে মারধর করা হয় বলেও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
প্রতিবেদনটিতে সূত্রের বরাতে উল্লেখ করা হয়, ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে সেবা ইঞ্জিনিয়ারিং নামের ওই দোকান থেকে বেশ কিছু লোহার পাত চুরি হয়। সকালে দোকান মালিক হাসান এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন পাশের ভাঙারি ব্যবসায়ী সাইদুল চোরাই লোহার পাতগুলো কিনেছে। পরে সাইদুলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মিঠুন ও লিংকনকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন দোকান মালিক হাসান ও স্থানীয় কিছু লোকজন। তবে প্রতিবেদনের কোথাও নির্যাতনের শিকার দুই তরুণের ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও তাদের বাবার নাম উল্লেখ করা হয়। মিঠুন বাবুগঞ্জ উপজেলার দোয়ারিকা গ্রামের চান মুন্সির ছেলে এবং লিংকন একই গ্রামের বাবুল বেপারীর ছেলে বলে প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়।
উক্ত ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া গেলেও কোনোটিতেই তাদের ধর্মীয় পরিচিয় পাওয়া যায়নি। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে। তবে তাদের বাবার নাম দেখে ধারণা করা যায়, তারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিত হওয়ার জন্যে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ওসি জাকির হোসেন শিকদারের সাথে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মারধরের এই ঘটনাটি বেশ আগের। বর্তমানে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাগারে আছেন। তবে নির্যাতনের শিকার কেউ-ই হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয়, তারা সকলেই মুসলিম।
সুতরাং, চুরির অভিযোগে বরিশালে দুই মুসলিম তরুণকে মারধরের ভিডিওকে বাংলাদেশে হিন্দু তরুণদের মারধরের ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Dhaka Mail Website: চুরির অভিযোগে দুই যুবককে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, দোকান মালিক আটক
- Prothom Alo Website: বরিশালে চুরির অভিযোগে দুই তরুণকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল, একজন গ্রেপ্তার
- Kaler Kantho Website: চুরির অভিযোগে দুই যুবককে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল
- Channel24 Website: চুরির অপবাদে দুই যুবককে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল
- Statement of Zakir Hossain Sikder, Officer In-Charge, Airport Police Station, Barisal Metropolitan Police
- Rumor Scanner’s Analysis