চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার রিয়াদের জামিন হয়নি

গত ২৬ জুলাই চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা (উক্ত অভিযোগে গ্রেফতারের পর বহিষ্কৃত) আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ।

রিয়াদকে জামিন দেওয়া হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদকে জামিন দেওয়া হয়নি। বরং, কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। 

রিয়াদের গ্রেফতার ইস্যু

অনুসন্ধানের শুরুতে রিয়াদের গ্রেফতার ইস্যু নিয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৬ জুলাই ‘চাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাসহ আটক ৫’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই ঢাকার গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, এর আগে গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক কমিটির দুই নেতা রিয়াদ, অপুসহ কয়েকজন শাম্মী আহমেদের স্বামীর কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং ১০ লাখ টাকা আদায়ও করেন। ২৬ জুলাই রাত আটটার দিকে চাঁদার বাকি টাকা আনতে গেলে পুলিশ আগে থেকে এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থল রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে।

প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২৭ জুলাই প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‍উক্ত ঘটনায় গ্রেফতার আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদসহ চারজনকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত ২৭ জুলাই এ আদেশ দেন। গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

আলোচিত দাবি প্রচারিত হওয়ার সম্ভাব্য তারিখ

এই বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৩১ জুলাই থেকে আলোচিত দাবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ‘Dalton Souvato Heera’ নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩১ জুলাই করা পোস্টে দাবি করা হয়, ‘গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার রাজ্জাক রিয়াদ কে জামিন দেয়া হইছে।

হইতেই হবে। নতুন বন্দোবাস্তের বাংলাদেশ।’

এছাড়াও, পোস্টের মন্তব্যের ঘরে তিনি লিখেন, ‘৪ টা মামলার একটায় জামিন দেয়া হইছে। আরেকটিতে রিমান্ড চলমান। জামিন মানে মুক্তি পায় নাই।’

রিয়াদের বিষয়ে ৩১ জুলাইয়ের পরবর্তী গণমাধ্যমের তথ্য

অনুসন্ধানে, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ২৪.কম এর ওয়েবসাইটে গত ৩ আগস্ট ‘গুলশানে চাঁদাবাজি: রিয়াদের দোষ স্বীকার, ৪ আসামি কারাগারে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট ঢাকার মহানগর হাকিম সেফাতুল্লাহ ১৬৪ ধারায় আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ) এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। 

রিয়াদের নামে যত মামলা

অনুসন্ধানে, অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজ২৪.কম -এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ জুলাই ‘আরও একটি মামলা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, রিয়াদের বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যমানের চারটি চেক উদ্ধারের ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি নতুন মামলার প্রক্রিয়া চলছে। ৩০ জুলাই রাজধানীর মিন্টুরোডে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

চেক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা সম্পর্কে কলাবাগান থানার ওসি মো. ফজলে আশিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যনারকে জানান, চেক উদ্ধারের ঘটনায় কলাবাগান থানায় মামলা হয়নি। মামলাটা তেজগাঁও থানায় হওয়ার কথা। বাদী ঘটনার স্থান ভুুল বলার কারনে কলাবাগান থানার নাম এসেছে। 

পরবর্তীতে, রিয়াদের মামলার বিষয়ে জানতে গুলশান থানায় সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার। গুলশান থানা থেকে জানানো হয়, “গত ৩১ জুলাই রিয়াদ রিমান্ডেই ছিল। জামিনের বিষয়টি গুজব।” এছাড়াও, রিয়াদের নামে তেঁজগাও থানায়ও একটি মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, চাঁদাবাজির ঘটনায় রিয়াদের জামিন হয়নি এটা নিশ্চিত। আমাদের থানায়ও (তেজগাঁও) তার নামে একটা মামলা আছে।

অর্থাৎ, উল্লিখিত তথ্য প্রমাণ থেকে নিশ্চিত যে, তেজগাঁও কিংবা গুলশান কোনো থানার মামলাতেই  রিয়াদের জামিন হয়নি।

এছাড়া, রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে রিয়াদের নামে গুলশান এবং তেজগাঁও থানা ব্যতীত অন্য কোনো থানায় তার নামে মামলার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদকে জামিন দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img