সম্প্রতি ‘আ.লীগ নিষিদ্ধের রীট খারিজ! সারাদেশে আওয়ামী লীগের আনন্দ মিছিল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে’ শিরোনামে একটি ভিডিও শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)৷
এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া অবধি টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ২ লক্ষবার দেখা হয়েছে, ভিডিওতে প্রায় ১৫ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি প্রায় সতের শত বার শেয়ার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে আদালত কর্তৃক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট খারিজ হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত পুরোনো ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পৃথক কিছু ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপগুলোগুলো পৃথকভাবে যাচাই করেছে রিউমর স্ক্যানার।
ভিডিও যাচাই- ১
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির প্রথম ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:০১ থেকে ০০:০৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণীতে বলা হয়, ‘সারডা সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে একটি রিট আবেদন করে। সে বছরের ০১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে৷
এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও ফুটেজটি পুরোনো এবং সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ হওয়ার ঘটনার নয়।
ভিডিও যাচাই- ২
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর ‘দুই মাস পরে আদালতে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের স্লোগান’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির দৃশ্যাবলীর সাথে প্রচারিত ভিডিওটির দ্বিতীয় ফুটেজের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটির ০০:০১ থেকে ০০:১০ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশটি প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিওটির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর পৃথক দুটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও ফারুক খানকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালতে শুনানি শেষ হওয়ার পর পুলিশ ফারুক খানকে এজলাস থেকে আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আদালতের সামনে ২০ থেকে ২৫ জন আইনজীবী ও কয়েকজন যুবক স্লোগান দিতে থাকে। এটি সেই মিছিলের ভিডিও।
একই বিষয়ে গণমাধ্যম প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর ‘ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের বিক্ষোভ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই ধরণের চিত্র ও তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, প্রচারিত ভিডিও ফুটেজটিও সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী গত ১২ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সুতরাং, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের রিট খারিজ হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের সাথে আরও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ যুক্ত করে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের রিট খারিজ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।