সম্প্রতি, শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধআদালত (ICC) একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে দাবি করা হয়, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত International Criminal Court (ICC) থেকে আগামী ১৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছে,
অন্যথায় শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করার দায়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেফতারের আদেশ আসবে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর উপর।
আজ নেদারল্যান্ডস থেকে International Criminal Court (ICC) এর এক ভিডিও বার্তায় এমন নির্দেশ এসেছে।’
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে,
এক. আইসিসি ১৭ কার্যদিবসের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছে।
দুই. যদি পদত্যাগপত্র দেখাতে না পারে, তবে শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেফতারের জন্য বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
তিন. এই নির্দেশটি নেদারল্যান্ডস থেকে আসা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) একটি ভিডিও বার্তা থেকে এসেছে, অর্থাৎ প্রচারিত ভিডিওটি।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে কোন ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ/মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর তদন্ত শুরুর অনুমোদন দেয়। সেই অনুমোদনের বিষয়ে প্রচারিত ভিডিওর অংশ ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ‘Ask The Court: Opening of ICC investigations into the situation in Bangladesh/Myanmar’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ১ মিনিট ২১ সেকেন্ড অংশ থেকে ৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

উক্ত ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ৩-এর বিচারকরা প্রসিকিউটরের অনুরোধ মঞ্জুর করেন। এর ফলে আইসিসি’র এখতিয়ারভুক্ত অপরাধসমূহ সংঘটনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পরিস্থিতির ওপর তদন্ত শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয়। চেম্বার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের নির্বাসন এবং জাতিগত ও/অথবা ধর্মীয় কারণে তাদের ওপর নিপীড়নের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
পুরো ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে জানা যায় যে, এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বিচারকরা কেন বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে তদন্তের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তা আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে, বিচারকরা তাঁদের সিদ্ধান্তে ভুক্তভোগীদের মতামত বিবেচনা করেছেন কি না, এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী হবে – যেমন প্রমাণ সংগ্রহ, সমন বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, মামলার কার্যক্রম কীভাবে চলবে—সেসব বিষয়েও কথা বলতে দেখা যায়। এছাড়া, মিয়ানমারের আইসিসির সাথে সহযোগিতা করার বাধ্যবাধকতা আছে কি না এবং আইসিসি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পরিস্থিতির সমস্ত অপরাধীর বিচার করবে কি না বা করতে পারে কি না, সে বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত প্রেস রিলিজ থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া ইস্যুতে আইসিসির ভিডিও বার্তা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- IntlCriminalCourt : Ask The Court: Opening of ICC investigations into the situation in Bangladesh/Myanmar
- International Criminal Court (ICC) : ICC judges authorise opening of an investigation into the situation in Bangladesh/Myanmar