ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্য দাবিতে ভারতীয় সাইবার অপরাধী আটকের দৃশ্য প্রচার

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আসাম রাজ্যসহ নানা রাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী দাবিতে ভারত সরকার নানা জায়গায় আটক ও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে বাঁশের সিলিং বা ছাঁদ থেকে একজন ব্যক্তিকে অপর একজন ব্যক্তি নামাচ্ছেন। ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আসাম পুলিশ ঘরের ভিতর বাঁশের তৈরি সিলিং এর উপর লুঙ্গি বাহিনী লুকিয়ে রয়েছে ভারতে অবস্থানরত  বাং*লাদেশি ও রো*হিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ এর বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে এদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।”

অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্য।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য, আলোচিত দাবিটি মূলত ভারত থেকে পরিচালিত অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হতে দেখা যায়।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্যের নয় বরং, গত ১৬ এপ্রিল ভারতের আসামের মরিগাঁও জেলা থেকে ভারতীয় সাইবার অপরাধীর আটকের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৭ লক্ষ রুপি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে ভারতের আসাম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘এনকেটিভি’র ফেসবুক পেজে গত ১৭ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতেও ‘এনকেটিভি’র লোগো দেখতে পাওয়া যায় যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে মূলত এনকেটিভির উক্ত ভিডিওটি আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ছাদের ওপর লুকিয়ে ছিল। রাতে অভিযান চালিয়ে ছাদ থেকে নামিয়ে ৫ অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরিগাঁও পুলিশের সহযোগিতায় মুম্বাই সিটি সাইবার সেল এই অভিযান চালিয়েছে।” (অনূদিত)

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে এনই’ এর ইউটিউব চ্যানেলে এ বিষয়ে গত ১৭ এপ্রিলে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে আলোচিত দৃশ্যেরও সংযুক্তি পাওয়া যায়। ভিডিওটির বর্ণনা অংশে বলা হয়, “১৬ এপ্রিল রাতে মুম্বাই পুলিশের সাইবার সেল আসামের মরিগাঁও জেলার লাহরিঘাট এলাকায় মরিগাঁও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় একটি বড়সড় অভিযান চালায়। এই যৌথ অভিযানে সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।” (অনূদিত)

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় আরেক সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের ওয়েবসাইটে গত ১৮ এপ্রিলে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “একটি সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিত অভিযানে, মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ আসামের মরিগাঁও জেলার একটি দূরবর্তী গ্রাম থেকে পাঁচজন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা একটি বড়সড় ক্রেডিট কার্ড প্রতারণার ছক চালিয়ে বৈশ্বিক ব্যাংক সংস্থা HSBC-কে ১.২৭ কোটি রুপির ক্ষতির মুখে ফেলে। তদন্তকারীদের মতে, অভিযুক্তরা – যাদের বয়স ২০ ও ৩০-এর দশকে – ডিজিটাল ঘাটতি ও পরিচয় জালিয়াতির সুযোগ নিয়ে ভুয়া নথিপত্র ব্যবহার করে HSBC-র ৫৫টি ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করে। এসব কার্ড ব্যবহার করে তারা বিলাসবহুল কেনাকাটা ও বিভিন্ন ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গোপনে টাকা স্থানান্তর করে। অভিযুক্তদের পরিচয়: মোহেবুর আব্দুল রহমান (২৮), সাদিকুল ইসলাম (২৭), ইলিয়াস রফিকুল ইসলাম (২৫), আবু বকর সিদ্দিক রমজান আলি (৩৭), এবং মহিমুদ্দিন আহমেদ আব্দুল মালিক (২৬), এরা সবাই মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। (অনূদিত)

তবে কোথাও আটককৃত ব্যক্তি অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী এরূপ তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও, অনুসন্ধানে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতকের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গত ৩১ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, আটককৃতরা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী কিনা তা জানতে মরিগাঁও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীরণ বৈশ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিশ্চিত করে জানান, “ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তি-সহ ধৃত ৫ অভিযুক্তই মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। তাদের কেউই অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী নয়। এবং তাদেরকে  অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হওয়ার জন্য নয় বরং সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল।”

সুতরাং, গত ১৬ এপ্রিল ভারতের আসামের মরিগাঁও জেলা থেকে ভারতীয় সাইবার অপরাধীর আটকের ভিডিওকে ভারতের আসামে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী গ্রেফতারের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img