চাঁদপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হিন্দু নারীকে নিহত দাবিতে প্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “চাঁদপুরে মাটি কেটে ঘরে ঢুকে হিন্দু নারী কে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা” লেখা সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সংযুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে। তবে ফটোকার্ডটিতে ‘হত্যা চেষ্টা’ উল্লেখ থাকলেও ক্যাপশনে ইংরেজিতে দাবি করা হয়েছে, “৪৬ বছর বয়সী বাংলাদেশী হিন্দু নারী ইসলামপন্থীদের হাতে নিহত”। (অনূদিত)

এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উল্লেখ্য, এই এক্স অ্যাকাউন্টটি ভারত থেকে পরিচালিত হচ্ছে। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চাঁদপুরে দুর্বৃত্তের হামলার শিকার এই নারী নিহত হননি। প্রকৃতপক্ষে তিনি আহত হয়েছেন এবং এখন শঙ্কামুক্ত আছেন বলে তার ছেলে জানিয়েছেন।

আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘সনাতন টিভি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ১০ জুলাইয়ে ‘চাঁদপুরে মাটি কেটে ঘরে ঢুকে হি’ন্দু নারী কে কু*পি*য়ে হ*ত্যা চেষ্টা..’ শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টটিতে আলোচিত ফটোকার্ডটির সংযুক্তি পাওয়া যায় এবং পেজটির অন্যান্য ফটোকার্ডসহ সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ‘সনাতন টিভি’র উক্ত ফটোকার্ডটিই মূল ফটোকার্ড।

এছাড়া, ফটোকার্ড সম্বলিত ফেসবুক পোস্টটির মন্তব্য বিভাগ পর্যবেক্ষণ করলে সনাতন টিভির একটি মন্তব্য পাওয়া যায়। মন্তব্যটিতে বলা হয়, “চাঁদপুর সদর উপজেলায় মাটি কেটে ঘরে ঢুকে কাজল চক্রবর্তী (৪৬) নামে এক হিন্দু নারীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ভোর ৪টার দিকে উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ভাটেরগাঁও ছোট পন্ডিত বাড়িতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। আহত কাজল চক্রবর্তী বর্তমানে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।”

উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম ‘আরটিভি’র ওয়েবসাইটে “সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে কুপিয়ে জখম” শীর্ষক শিরোনামে গত ১০ জুলাইয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “চাঁদপুরে গভীর রাতে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত গৃহবধূ কাজল রাণী চক্রবর্তীকে (৪৬) কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ভাটেরগাঁও ছোট পণ্ডিত বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। আহত কাজল রাণী চক্রবর্তী মৃত কৃষ্ণপদ চক্রবর্তীর স্ত্রী। আহত কাজল রাণীর ছোট ছেলে প্রদীপ চক্রবর্তী ও স্থানীয়রা জানান, বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত ভোর ৪টার দিকে দুর্বৃত্তরা সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে, সিনায় ও হাতে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে খাটের নিচ দিয়ে সিঁদ কেটে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় কাজল রাণীকে উদ্ধার করে দ্রুত চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্মরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।” 

অর্থাৎ, হামলার শিকার হওয়া নারী কাজল চক্রবর্তী নিহত হওয়ার দাবির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পরবর্তীতে রিউমর স্ক্যানার টিম শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ সোহেলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “উক্ত ঘটনা তার ওয়ার্ডেই ঘটেছে এবং হামলার শিকার ওই নারী সুস্থ আছেন। তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।”

এছাড়াও, রিউমর স্ক্যানার টিম আহত নারীর ছেলে প্রদীপ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিশ্চিত করেন, “কাজল চক্রবর্তীকে বাসায় আনা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন শঙ্কামুক্ত আছেন।”

সুতরাং, চাঁদপুরে দুর্বৃত্তের হামলায় কাজল চক্রবর্তী নামের এক নারীর আহত হওয়ার ঘটনাকে নিহত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img