গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর ছুড়ে লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই প্রেক্ষিতে, নিহত সোহাগের শেষ ভিডিও দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে সোহাগের মতো দেখতে এক ব্যক্তি বলেন, “আমি মো. সোহাগ। আমার এই ভিডিওটা হয়তো স্মৃতি হয়ে থাকবে। একদিন হয়তো আমি থাকব না। কিন্তু অনেকদিন বাঁচার খুব ইচ্ছা আমার। আমার দুটো সন্তান হয়েছে, তাদের অনেক ভালো কিছু বানাবো—এটাই আমার ইচ্ছা রে, তাদের মানুষের মতো মানুষ বানাবো।”
এই দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল একটি পোস্ট দেখা হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখবার। একই বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও টিকটকেও দেখা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ২৭ লাখবার। আর ইউটিউবে ভাইরাল একটি ভিডিওর ভিউ সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার।

এ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে।
টিকটকে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে।
ইউটিউবে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
ইন্সটাগ্রামে প্রচারিত দাবি দেখুন: এখানে, এখানে, এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. সোহাগের শেষ ভিডিও নয়। বরং, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা একটি ভুয়া ভিডিও।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম বেশ কয়েকটি এআই-জনিত অসংগতি শনাক্ত করে। ভিডিওতে কথিত সোহাগের মুখভঙ্গি অস্বাভাবিক ও অপ্রাকৃতিক মনে হয়। পাশাপাশি, আলো-ছায়ার অসামঞ্জস্যতা, দ্রুত নড়াচড়ার সময় মুখ বিকৃত হয়ে যাওয়া, মুখের চারপাশে ঝাপসা ভাব, চোখের পাতায় কম ঝাপটানি বা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার মতো বিষয়ও চোখে পড়ে। এসব লক্ষণ থেকে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সন্দেহ তৈরি হয়। এ ছাড়া, কথার সঙ্গে ঠোঁটের নড়াচড়ার মিল পাওয়া যায়নি, যা এআই ভিত্তিক লিপ সিঙ্ক টুল ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।
অডিও অংশেও এআই ব্যবহারের লক্ষণ দেখা গেছে। বক্তার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক মানুষের মতো নয়, বরং কৃত্রিম বা রোবোটিক শোনায়। মুখের গতিবিধির সঙ্গেও কণ্ঠস্বরের তালে মিল দেখা যায় না। বক্তা টানা কথা বললেও শ্বাস নেওয়ার স্বাভাবিক শব্দ বা কণ্ঠে টোনের ওঠানামা নেই। এ ছাড়া, তিনি খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেও, আশপাশে কোনো পরিবেশগত শব্দ, যেমন পাখির ডাক বা বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। অডিও অংশটিও এআই-নির্ভর টেক্সট-টু-স্পিচ প্রযুক্তিতে তৈরি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
পরবর্তীতে, ভিডিওটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভ মোডারেশনে পরীক্ষা করে দেখা যায়, ভিডিওর অডিও অংশটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯২ শতাংশ।

এছাড়া, সোহাগের এমন কোনো ভিডিও থাকলে তা স্বাভাবিকভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের কোনো গণমাধ্যমে এই ভিডিওটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি বিশ্বস্ত কোনো সূত্র থেকেও ভিডিওটি প্রকাশিত হয়নি।
ভিডিওটি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে, সোহাগ হত্যাকাণ্ড নিয়ে ১৬ জুলাই বাংলানিউজ২৪-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সোহাগের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচিত ভিডিওর সঙ্গে এই ছবির মিল পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই ছবি ব্যবহার করেই এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে অসংখ্য ফ্রি এআই টুলস রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে স্থির চিত্র থেকে সহজেই ভিডিও তৈরি করা সম্ভব। এ ধরনের কোনো টুল ব্যবহার করেই আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিওকে মিটফোর্ডে নিহত সোহাগের শেষ ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis.
- Banglanews24: সোহাগ হত্যা: তিন আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে
- Hive Moderation.