মিটফোর্ডে খুনের শিকার ইসলাম ধর্মাবলম্বী সোহাগকে হিন্দু দাবিতে অপপ্রচার

গত ৯ জুলাই মিটফোর্ডে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক আঙ্গিকে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন।

এরূপ দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন: এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টাইমস, ইন্ডিয়া টিভি নিউজ, ইন্ডিয়া টুডে, উইয়ন, নিউজ১৮, টিভি৯ বাংলা, এবিপি লাইভ, ভাস্কর, জি নিউজ, এনটিভি তেলেগু, ইটিভি ভারত, ওয়ান ইন্ডিয়া, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড, কলকাতা টিভি, কলকাতা ২৪×৭, জুম নিউজ, লাইভ হিন্দুস্তান, হিন্দু পোস্ট, এনটি নিউজ, জাগরণ, নিউজ২৪ অনলাইন, পাঁচজন্য, জনসত্ত, পাঞ্জাব কেসারি

এছাড়া, ধর্ম অবমাননার দায়ে জামাত কর্মীদের দ্বারা হিন্দু ব্যবসায়ী সোহাগকে খুন করা হয়েছে দাবিও এক্সে প্রচার করা হয়েছে। এরূপ দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৯ জুলাই মিটফোর্ডে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়া ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নন বরং, তার পুরো পরিবারসমেত তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বী।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি স্টার’ এর ওয়েবসাইটে “Sohag laid to rest beside his mother’s grave in Barguna” শীর্ষক শিরোনামে গত ১২ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সোহাগকে বরগুনার ঢালুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরে তার মায়ের পাশে গত ১১ জুলাইয়ে দাফন করা হয়েছে। তার মায়ের নাম আলেয়া বেগম, বাবার নাম আইয়ুব আলী৷ সোহাগের এক বোনের নাম ফাতেমা এবং তার স্ত্রীর নাম লাকি বেগম। এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম বাংলা ভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।

এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম ‘যুগান্তর’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সোহাগের মেয়ের নাম সোহানা। 

এছাড়া, মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘সময় নিউজ’ এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, সোহাগের ছেলে সন্তানের নাম সোহান। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘রাইজিংবিডি’ এর ওয়েবসাইটে গত ১২ জুলাইয়ে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১১ জুলাই সকাল ১০টার দিকে তড়িঘড়ি করে ছোট পরিসরে সোহাগের জানাজা নামাজ আদায় করা হয়।

অর্থাৎ, নিহত হওয়া ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ ও তার পরিবারের সদস্যের নাম পর্যবেক্ষণ করে তাদের সকলেই মুসলিম বলে প্রতীয়মান হয়। পাশাপাশি, দাফনের আগে সোহাগের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজার নামাজ শেষে মুসলিম রীতির অনুরূপ সোহাগকে তার মা আলেয়া বেগমের কবরের পাশে দাফন করা হয়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সোহাগ মুসলিম ও মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন। 

এছাড়া, ধর্ম অবমাননার দায়ে জামাত কর্মীদের দ্বারা হিন্দু ব্যবসায়ী সোহাগকে খুন করা হয়েছে এরূপ দাবি এক্সে প্রচার করা হলেও মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সূত্রে এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। মামলার তদন্তকারী ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ চাঁদাবাজি। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

সুতরাং, গত ৯ জুলাই মিটফোর্ডে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হওয়া ভাঙারি ব্যবসায়ী ইসলাম ধর্মাবলম্বী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে ভারতীয় গণমাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দাবি করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img