আজিমপুর কবরস্থানে হলেও নিজ দেশে দাফন করতে বলেননি শেখ হাসিনা, একাত্তরের সম্পাদিত ফটোকার্ড প্রচার

সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য দাবিতে “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার গণমাধ্যম একাত্তর এর লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও, -শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম একাত্তর টিভি কোনো ফটোকার্ড প্রচার করেনি এবং শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এমন কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ” শীর্ষক শিরোনামে ‘একাত্তর’ এর প্রচারিত ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করলে তাতে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘একাত্তর’ এর লোগো ও ফটোকার্ডটি প্রচারের তারিখ হিসেবে ‘১৯ জুন ২০২৫’ দেখা যায়। এরই সূত্র ধরে ‘একাত্তর’ এর ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করলে এ সংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, ‘একাত্তর’ এর ফেসবুক পেজে গত ১৯ জুন “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ” শীর্ষক তথ্য সম্বলিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। 

Photocard Comparison by Rumor Scanner 

উক্ত ফটোকার্ডটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আলোচিত ফটোকার্ডের সাথে উক্ত ফটোকার্ডের লোগো, ছবি, তারিখ ও তারিখের ফন্টের মিল রয়েছে। তবে শেখ হাসিনার মন্তব্য দাবিতে প্রচারিত লেখা ও লেখার ফন্টের বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। একাত্তর এর উক্ত মূল ফটোকার্ডটিতে “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শুনানির জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ” শীর্ষক বাক্য থাকলেও প্রচারিত ফটোকার্ডটিতে এর পরিবর্তে “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও, -শেখ হাসিনা” শীর্ষক বাক্য লেখা হয়েছে। 

এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় একাত্তর টিভির এই ফটোকার্ডটি সম্পাদনা (এডিট) করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। 

মূল ফটোকার্ড সম্বলিত “একাত্তর” এর পোস্টে মন্তব্যের ঘরে পাওয়া গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, “ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে এক জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এই আদেশ দেন। সেই সাথে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৫ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরেও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে  বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের অভিমত ট্র্যাইব্যুনাল শুনবেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।..” উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও শেখ হাসিনার নামে প্রচারিত মন্তব্যটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, “আমি মারা গেলে নিজের দেশে আজিমপুর কবর স্থানে হলেও আমাকে দাফন করিও, -শেখ হাসিনা” শীর্ষক দাবিতে একাত্তরের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img