নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের দাবিটি ভুয়া


সম্প্রতি, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মর্মুর সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করবে শীর্ষক দাবিতে Tamanna Akhter Yesman নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। উক্ত ছবি ও ভিডিও সম্বলিত পোস্টটিতে আরও দাবি করা হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আওয়ামী লীগকে ৭৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরবর্তীতে ফেসবুকের বিভিন্ন পেজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে একই দাবি প্রচার হতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ভিডিও ও ছবির সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ইস্যুর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। প্রকৃতপক্ষে, ২০২২ সালে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস দমন কমিটির প্রতিনিধিদলের প্রধানদের সাথে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর বৈঠকের দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে থাকা ভিডিওটি যাচাইয়ের চেষ্টা করে রিউমর স্ক্যানার। উক্ত ভিডিওটি থেকে প্রাপ্ত কিছু কী ফ্রেম রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতির ভেরিফাইড ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবরে ‘Heads of Delegations of the UN Security Council’s Counter Terrorism Committee called on President’ শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ৬ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিওর শুরুর অংশের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে থাকা পোস্টের ভিডিওর মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

পরবর্তীতে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Hindustan Times এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবরে ‘President: India has a national commitment to fight terrorism’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী কমিটির (CTC) বিশেষ বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান তুলে ধরেন। সেসময় তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিও এবং ছবির সঙ্গে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।

তাছাড়া, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কিংবা বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনায় আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণার খবর প্রকাশিত হয়নি।

পাশাপাশি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ৭৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শীর্ষক দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১২ মে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত এমন ব্যক্তি বা সত্তা এবং তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এই অধ্যাদেশের আলোকে আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।

সুতরাং, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠকের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img