ফ্যাক্টচেকআন্তর্জাতিকরাজনীতি

ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা এনসিপিকে নিষিদ্ধ করেনি

RS Team

সম্প্রতি, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দাবিসহ কিছু তথ্য সম্বলিত একটি পোস্ট  ‘Tamanna Akhter Yesman’ নামক একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে,

 ‘ব্রেকিং নিউজ 
বাংলাদেশ বৈষম্য ছাত্র সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা। 
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে আয়োজিত কাপ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছি ৮৯ বিশিষ্ট নাগরিকসহ যোগ দিয়েছেন ডা: মোহাম্মদ ইউনুস
বাংলাদেশ বৈষম্য ছাত্র সংগঠন এনসিপি বা নাগরিক পার্টির অর্থ পাচার দুর্নীতি এবং স্বাধীনতাগামী ডিজিটাল নিরাপত্তা তথ্য পাচারের প্রমান পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হলো।
বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ছাড়া বৈষম্য ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে
আজ বাংলাদেশ আন্তবর্তীন কালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডা: মোহাম্মদ ইউনুসকে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে এবং পাচারকৃত অর্থ কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
আমরা ৫৭ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষ থেকে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন গনতন্ত্র দিতে জোরালো আহবান জানিয়েছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় পার্টির নির্বাচনের অংশগ্রহণে বাঁধা থাকছে না।
একই সাথে হয়রানিমুলক মামলা থেকে আসামিদের মুক্তি দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
কাপ সম্মেলন ২০২৫ উপলক্ষে বক্তব্য রাখছি 
নির্বাচনের আইন লংঘন না করতে বাংলাদেশ আন্তবর্তীন কালিন সরকারের প্রতি আহবান।’ (বানান অপরিবর্তিত)

উক্ত দাবিতে অন্যান্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির)  ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি বরং, ২০২৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘কনফারেন্স অব পার্টিসে’র (কপ) ২৮তম আসরের ছবি দিয়ে আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। ছবিতে থাকা নারীর নাম তামান্না আক্তার ইয়াসমান নয়, তিনি হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি। 

এই বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে ‘COP28 UAE’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। 

জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন COP28 (Conference of the Parties 28) ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এছাড়া, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিতে থাকা নারী হলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রিম আল হাশিমি। ছবিগুলোর বিষয়ে দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।

Screenshot: healthpolicy-watch

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে আয়োজিত কাপ সম্মেলন দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো ২০২৩ সালে যুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘কনফারেন্স অব পার্টিসে’র (কপ) ২৮তম আসরের।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে আজারবাইজানের বাকুতে COP29 সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ২০২৫ সালে, অর্থাৎ চলতি বছরে COP30 সম্মেলন ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত হবে।

তাছাড়া, ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে আয়োজিত কাপ সম্মেলন নামে কোনো নির্দিষ্ট সম্মেলনের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তবে, গত ১২ জুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাকিংহাম প্যালেসে ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং একই দিনে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি ব্রিটেনের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘কিংস চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেছেন।

পরবর্তীতে, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নিষিদ্ধ ও তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হয়েছে দাবির বিষয়ে জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূল ধারার গণমাধ্যম ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ (MI6) ও ইউকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার নিষেধাজ্ঞার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

সুতরাং, ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন কিংবা জাতীয় নাগরিক পার্টির  ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img