অস্ত্রসহ পাহাড়ি আটক দাবিতে নাটোরের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার 

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের বিচার দাবিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নগরীতে আন্দোলন ও অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। এসময় পুলিশ ও স্থানীয় বাঙালিদের সাথে সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। উক্ত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকেও দায়ী করা হয়। এরপর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নেতিবাচক প্রচারণা করতে দেখা যায়। এর প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি, পাহাড়িদের একটি দল ব্যাগ ভর্তি অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত ভিডিওটি পাহাড়িদের একটি দল অস্ত্রসহ সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ঘটনার নয়। এছাড়াও ভিডিওটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর  কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, নাটোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র ও খেলনা পিস্তলসহ ৬ জনকে আটকের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে রাজ্য নেই তবুও রাজা নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২১ জুন নাটোরে খেলনা পি’স্ত’ল দিয়ে ছিন*তা’ইয়ের চেষ্টা, সেনাবাহিনীর হাতে আটক ৪ ডা’কা’ত শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। 

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উক্ত ভিডিওর ২৮ সেকেন্ড থেকে শুরু হওয়া ফুটেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল রয়েছে। উভয় ভিডিওতেই একই সেনাসদস্যকে নীল টি-শার্ট পরিহিত একই ব্যক্তিকে থাপ্পড় মারতে দেখা যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ভিডিওতে দেখতে পাওয়া চারজন ব্যক্তি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন। এসময় তাদের কাছে একটি খেলনা পিস্তল ছিল বলে পোস্টটিতে ‍উল্লেখ করা হয়। ভিডিওটিতেও নীল টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তিকে একটি পিস্তল ফেলে দিতে দেখা যায়। যা পরবর্তীতে ওই সেনাসদস্য উদ্ধার করেন।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম জাগোনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে একইদিন (২১ জুন) উক্ত ঘটনায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Jagonews24

প্রতিবেদনটিতেও সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়া একই ব্যক্তিদের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ২০ জুন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কালাকান্দর স্লুইসগেট এলাকা থেকে রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ওই চারজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতদলের দুই প্রধানকেও আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয় বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনটি থেকে আরো জানা যায়, আটক ব্যক্তিরা হলেন- উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে ডাকাত দলের প্রধান আব্দুর রাজ্জাক (৩৮) ও মৃত কামাল হোসেনের ছেলে কাওসার আহম্মেদ (২৫), আব্দুল আজিজের ছেলে বিপ্লব হোসেন (২৪), মোবারক আলীর পুত্র মবিদুল ইসলাম (২১), হরদমা গ্রামের রওশন আলীর ছেলে মনিরুল (২৪) ও কালিনগর পাধোয়া গ্রামের আব্দুল সালামের পুত্র সুরুজ আলী (২১)।

অর্থাৎ, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ-ই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নয়। এছাড়াও এ ঘটনায় একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনগুলোর কোথাও উক্ত ঘটনার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়নি। এমন প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে

সুতরাং, নাটোরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ ডাকাত দলের সদস্যদের আটক হওয়ার ভিডিওকে অস্ত্রসহ পাহাড়ি সম্প্রদায়ের লোক আটক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img