জনি সরকার হত্যা নিয়ে সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার: মুসলিম কর্তৃক হত্যার দাবিটি মিথ্যা

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একজন হিন্দু তরুণের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা দাবি প্রচার হতে দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ওই তরুণের ছবি এবং বস্তাবন্দি মরদেহের একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে— বাংলাদেশি হিন্দু যুবক জনি সরকারকে ইসলামপন্থীরা হত্যা করে বস্তায় ভরে ড্রেনে ফেলে দিয়েছে। ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টেও বাসা থেকে ডেকে নিয়ে দুই মুসলিম তরুণ ওই হিন্দু তরুণকে হত্যা করেছে বলে দাবি করা হয়েছে

ফেসবুক এবং এক্সে প্রচারিত এমন দাবির কিছু পোস্ট এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জনি সরকারকে মুসলিমরা হত্যা করেছে এমন দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়ার অভিযোগে জনি সরকারের পিতা মায়ের সহায়তায় তাকে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে ড্রেনে ফেলে দেয়।

পোস্টগুলোতে নিহত জনি সরকারের বর্তমান ঠিকানা নারায়ণগঞ্জ এবং স্থায়ী ঠিকানা সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উল্লেখ থাকায়, এসব তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে মূলধারার বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

এছাড়া, আলোচিত দাবির সাথে প্রচারিত ভিডিওর অনুরূপ পূর্ণ দৈঘের একটি ভিডিও অনুসন্ধানে ফেসবুকে, “গতকাল ফতুল্লা দক্ষিণ শিয়াচর লালখা এলাকায় একটি বস্তার মধ্যে এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে… পূর্ব শিয়াচর লালখা এডভান্স গার্মেন্টসের সামনে ‘নতুন রাস্তা’ নামে পরিচিত সড়কের পাশের ড্রেন থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার” শিরোনামে পাওয়া যায়।

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, জনি সরকার হত্যাকাণ্ডে তার বাবা-মা জড়িত রয়েছে। 

Photocard Comparison By Rumor Scanner

ঘটনাটি নিয়ে প্রকাশিত বাংলা নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদকাসক্ত ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যা করে বস্তায় ভরে ড্রেনে ফেলে দেন বাবা। এ ঘটনায় সহযোগিতা করেন মা।

ঘটনাটি ঘটে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি জানান ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরিফুল হক।

হত্যাকাণ্ডের শিকার জনি সরকার সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। তিনি খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কর্মরত করুনা সরকারের ছেলে। পুলিশ জানায়, জনি ছিলেন মাদকাসক্ত এবং প্রায়ই বাবা-মাকে মারধর করতেন।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল হাসিনুজ্জামান জানান, ১৬ জুন রাতেও জনি তার বাবা-মাকে মারধর করেন। পরে রাতে ঘুমিয়ে পড়লে রুটি বানানোর বেলন দিয়ে মাথায় ও মুখে আঘাত করেন তার বাবা। এতে জনি মারা গেলে, মায়ের সহায়তায় মরদেহ বস্তায় ভরে ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়।

পরদিন ১৭ জুন সকালে পুলিশ জনির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে। পরে জনির বাবা অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করলেও তদন্তে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “নারায়ণগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব প্রত্যুষ কুমার মজুমদার মহোদয়ের নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও ফতুল্লা থানা পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতার করতে অভিযানে নামে। ফতুল্লা মডেল থানার তদন্ত টিম সিসি ফুটেজ সংগ্রহ সহ সার্বিক তদন্তে হত্যাকান্ডের সহিত বাবা-মায়ের জড়িতের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিহতের বাবা-মাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের নিকট হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।”

অর্থাৎ, জনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা-মা জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। 

সুতরাং, হিন্দু যুবক জনি সরকারকে মুসলিমরা হত্যা করেছে শীর্ষক সাম্প্রদায়িক দাবিটি মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • News reports from various mainstream media outlets
  • Official post on Narayanganj District Police’s Facebook page
  • Facebook post by Sofikul Islam Bappy

আরও পড়ুন

spot_img