শেখ মুজিবসহ জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা করার খবরটি ভুয়া

অতি সম্প্রতি, শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেছে এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে এসব নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে শীর্ষক দাবি দেশের একাধিক গণমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

শেখ মুজিব

উক্ত দাবিতে প্রচারিত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন সমকাল, বিবিসি বাংলা, চ্যানেল২৪, কালের কণ্ঠ, যুগান্তর, বিডিনিউজ২৪, আমাদের সময়, বাংলানিউজ২৪, ইত্তেফাক, ইনকিলাব (এক্স), নিউজ২৪, এখন টিভি, বাংলা ট্রিবিউন, দৈনিক বাংলা, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস, ঢাকা মেইল, ঠিকানা নিউজ, ঢাকা পোস্ট (ফেসবুক), ঢাকা টাইমস২৪। 

একই দাবির ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে। 

একই দাবির ইউটিউব ভিডিও দেখুন এখানে। 

একই দাবির এক্স পোস্ট দেখুন এখানে। 
একই দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন এএনআই, দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া, রিপাবলিক বাংলা (ইউটিউব), জি নিউজ, দ্য ওয়াল, টাইমস নাউ, নর্থ ইস্ট নিউজ, নিউজ১৮ বাংলা (ইউটিউব), ইন্ডিয়া টিভি, ফার্স্ট পোস্ট, নিউজ১৮, লেটেস্টলি

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ মুজিবসহ জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা করার খবরটি সঠিক নয় বরং নতুন অধ্যাদেশ যাচাই করে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী মুজিবনগর সরকারের এই ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। তবে মুজিবনগর সরকারের অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী আজ সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানান, শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমেদসহ মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল- একটা ফেইক নিউজ। নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেয়া আছে।

ফারুকী তার পোস্টে এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশের একটি স্ক্রিনশটও যুক্ত করেছেন। 

এটির সূত্রে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় (বি.জি. প্রেস) এর ওয়েবসাইটে গতকাল (০৩ জুন) প্রকাশিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর পিডিএফ কপি খুঁজে পাওয়া যায়। অধ্যাদেশের সংজ্ঞা অংশে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

যেহেতু প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারে শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং জাতীয় চার নেতা মন্ত্রী হিসেবে ছিলেন সেক্ষেত্রে নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। অর্থাৎ তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল হওয়ার খবরটি সঠিক নয়। 

Screenshot: জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫

অন্যদিকে একই অংশে ১৫ (খ) নং পয়েন্টে বলা হয়েছে, যেসকল ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অধীন কর্মকর্তা না কর্মচারী বা দূত ছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন। 

শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতা যেহেতু উক্ত সরকারের কর্মকর্তা নয় বরং মন্ত্রীসভায় ছিলেন সেহেতু তারা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী নয়, বিবেচিত হবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে।  

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করলে জাতীয় দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরীর একটি মন্তব্য নজরে আসে। অধ্যাদেশের নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাকি মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। কারণ, তাদের নিয়েই মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই সরকারের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায়-ই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা ও দিক-নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে।’ 

এছাড়া, আরো অনুসন্ধানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের এই সংক্রান্ত গণমাধ্যমকে দেওয়া একটি বক্তব্যও খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বলবৎ থাকবে।

সুতরাং, শেখ মুজিবসহ জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা করা সংক্রান্ত দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img