ঘৃণা ছড়ানোর কারণে অমিত শাহ ক্ষমা চেয়েছেন দাবিতে ডিপফেক ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আমিত শাহ বাংলাদেশ পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করে ভারতের মুসলিম সহ সকলের কাছে ক্ষমা চাইলেন” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটির মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার/তাদের কার্যক্রমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।

ভিডিওতে অমিত শাহের কণ্ঠে হিন্দি ভাষায় শোনা যায়: আজ আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। হ্যাঁ, আমি জানি যে আমি ভারতের মুসলিমদের ওপর অত্যাচার করেছি। আমি পাকিস্তানের মানুষের বিরুদ্ধে বিষবাষ্প ছড়িয়েছি। বাংলাদেশের মানুষদের নিচু করে দেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজ যখন পাকিস্তান আমাদের কঠিন জবাব দিলো, তখন আমার উপলব্ধি হলো যে আমি কত ভুল করেছি। পাকিস্তান আমার চিন্তাধারাই পাল্টে দিয়েছে৷ আজ আমি বলতে চাই যে আমরা অনেক বড় পাপ করেছি৷ আমরা ঘৃণার আগুন জ্বালিয়েছি। কিন্তু, এই আগুনে আজ আমরা নিজেরাই পুড়ছি৷ আমি আজ পাকিস্তানি মানুষ ও ভারতের মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়িয়েছি। কিন্তু আজ ভুল বুঝতে পারছি৷ এখন আমরা চাচ্ছি হিন্দু ও মুসলিম একত্রে শান্তিতে বসবাস। প্লিজ আমাদের পাপ ক্ষমা করে দাও। আমরা/আমি অনেক বড় ভুল করেছি। (অনূদিত)

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

এরূপ দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন: এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মের নামে ঘৃণা ছড়ানোর কারণে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করে পাকিস্তানের নাগরিক এবং ভারতীয় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আলোচিত মন্তব্যটি করেননি। বরং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তার কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওর মাধ্যমে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ভিডিওটিতে অমিত শাহের কথাবার্তায় অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

পরবর্তীতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করলেও আলোচিত বক্তব্যসমেত অমিত শাহের কোনো ভিডিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি। এমনকি, তার এ ধরনের বক্তব্য লিখিত আকারেও দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি।

পরবর্তীতে ভিডিওটির অডিও অংশ ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘Sensity’-এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অমিত শাহের কথিত বক্তব্যটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৮১ শতাংশ এবং ‘Face Manipulation’ এর সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।

এছাড়া, ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল ‘ডিপফেক-ও-মিটার’-এর চারটি ভিন্ন মডেলের বিশ্লেষণেই দেখা গেছে, ভিডিওটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে ‘Lip-synced Deepfake Detection’ মডেলের মতে, ভিডিওটির এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ।

এছাড়াও, এআই তৈরি কনটেন্ট যাচাইকারী আরেক প্ল্যাটফর্ম হাইভ মডারেশনের মতেও উক্ত ভিডিওটি এআই বা ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সুতরাং, এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অমিত শাহের কণ্ঠ নকল করে তৈরি একটি ভিডিওকে অমিত শাহর ক্ষমা চাওয়ার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে, যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

  • Rumor Scanner’s analysis.
  • Hive Moderation
  • Sensity
  • Deepfake-o-meter

আরও পড়ুন

spot_img