মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ওসি প্রদীপের ফাঁসি কার্যকরের দাবিটি গুজব 

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হন। পরবর্তীতে মেজর সিনহার বোন টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং উপ-পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১৫ জন অভিযুক্তের রায় ঘোষণা করে। রায়ে প্রদীপ এবং লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস প্রদান করে।

গত ২৩ মে রাত ১২ টা ০১ মিনিটে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে ওসি প্রদিপ ও লিয়াকত এর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৩ মে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকত এর ফাঁসি কার্যকর করার দাবিটি সঠিক নয় বরং, উক্ত হত্যা মামলায় ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি এখনো অব্যাহতভাবে চলছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অন্তত গত ১২ মে থেকে ওসি প্রদীপের ফাঁসি সংক্রান্ত আলোচনা ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসতে দেখা যায়। সে সময়ের পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, “ওসি প্রদীপ ও এস আই লিয়াকত দুই জনের ফাঁসির রায় বহাল। সাত দিনের মধ্যে কার্যকর করার নির্দেশ।”

অনুসন্ধানে মূল ধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগো নিউজের ওয়েবসাইটে গত ১৭ মে “শুনানি চলছে, ৭ দিনে প্রদীপের ফাঁসি কার্যকরের সংবাদটি সঠিক নয়” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাত দিনের মধ্যে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের আদেশ নিয়ে যে সংবাদ ছড়িয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আপিলের শুনানিতে বিচারিক (নিম্ন) আদালতের রায়ের অংশ পড়ার সময় হয়তো কেউ না বুঝে সাত দিনের মধ্যে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ (বরখাস্ত) ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের সংবাদ করেন। এটা সঠিক খবর নয়। এখন তো মামলায় পেপারবুক থেকে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি করা হচ্ছে। রায়ের তো প্রশ্নই আসে না।

অর্থাৎ, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আপিল শুনানি চলছে। এরমধ্যে মৃত্যুদণ্ড শাস্তিপ্রাপ্তদের শাস্তি কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৫ এপ্রিল “আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন চলছে” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিল শুনানিতে পেপারবুক থেকে উপস্থাপন চলছে।

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, কোনো মামলায় বিচারিক আদালতে রায়ে আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। সাধারণত ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা এসব আপিল ও আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে। সিনহা হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে, যা একই বছর ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। 

ঢাকা টাইমস এর ওয়েবসাইটে গত ২২ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে কারা অধিদপ্তরের বরাতে বলা হয়েছে, প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার দাবিটি গুজব।  

সুতরাং, সম্প্রতি কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে ওসি প্রদিপ ও লিয়াকত এর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। 

তথ্যসূত্র 

আরও পড়ুন

spot_img