সেলিনা হায়াৎ আইভী জামিন পাওয়ার মিথ্যা দাবিতে ছড়ানো হলো যমুনা টেলিভিশনের ভুয়া ফটোকার্ড

গত ০৮ মে সারারাত অভিযান চালিয়ে পরেরদিন সকাল ছয়টায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গত ১২ মে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরনের আদেন দেন আদালত।

সম্প্রতি ‘জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী’ শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এছাড়া, একই দাবিতে যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ডও প্রচার হতে দেখা যায়।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ড যুক্ত করে ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক 

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা, ‘জামিনে মুক্তি পেয়েছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী’- শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় এবং যমুনা টেলিভিশনও এসংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি, বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া, যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন নকল করে ভুয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, বেশকিছু পোস্টের মন্তব্যের ঘরে একটি প্রতিবেদন লিংক রয়েছে।

প্রতিবেদন লিংকগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি ফ্রি ডোমেইন সাইটে তৈরি ব্লগস্পট লিংক।

‘newsalltime15’ নামক ফ্রি ডোমেইন সাইটে তৈরি ব্লগস্পট লিংকে প্রবেশ করে গত ১৪ মে প্রকাশিত “নাটকীয় মোড় – মুক্তি পেলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রেপ্তারের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই নাটকীয়ভাবে মুক্তি পেলেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তার মুক্তির খবরে নারায়ণগঞ্জ শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সমর্থকরা স্লোগান ও মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে এই খুশির খবর উদযাপন করছেন।

আজ একটু আগেই কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রাইভেট গাড়িতে করে বেরিয়ে আসেন আইভী। কারাগারের সামনে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন দলীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকরা। গাড়ি থেকে নেমেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু জনগণের ভালোবাসা এবং সত্যের শক্তির কাছে কোনো ষড়যন্ত্রই টিকে থাকতে পারে না।”

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, জনমতের চাপে এবং কেন্দ্র থেকে আসা বিশেষ নির্দেশেই এই মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইভীর গ্রেপ্তার ঘিরে নারায়ণগঞ্জে যেমন উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, ঠিক তেমনি দ্রুত মুক্তি পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

আইভী বলেন, “আমি কোনো অপরাধ করিনি। যারা আমাকে থামাতে চেয়েছিল, তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। আমি আবার জনগণের পাশে ফিরেছি।”

এদিকে, তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।”

পরবর্তীতে যমুনা টেলিভিশনের নামে প্রচারিত ফটোকার্ডটির বিষয়ে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটিতে যমুনা টেলিভিশনের লোগোর পাশাপাশি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৯ মে ২০২৫ উল্লেখ রয়েছে।

উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে এসংক্রান্ত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, যমুনা টেলিভিশনের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলেও এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি, প্রচারিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের সাথে যমুনা টেলিভিশন কর্তৃক প্রকাশিত ফটোকার্ডে ব্যবহৃত ফন্টের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

এছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অন্যকোনো গণমাধ্যমেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সেলিনা হায়াৎ আইভীর জামিনে মুক্তি পাওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং প্রচারিত যমুনা টেলিভিশনের ফটোকার্ডটি ভুয়া।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img