চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যাওয়া এই ব্যক্তি নিহত হননি, বেঁচে আছেন

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, চলন্ত ট্রেনে একজন ব্যক্তিকে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং এক পর্যায়ে তিনি ট্রেনের নিচে পড়ে যান। উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “ওনার বাচ্চাদের কথা চিন্তা করেন।  বাচ্চা গুলা এতিম হয়ে গেল অন্যায় করছে শাস্তি পেতো। তাই বলে মৃত্যু মোবাইল চুরি করতে গিয়ে মৃত্যু”। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে যে উক্ত ব্যক্তি ট্রেনের নিচে পড়ে নিহত হয়েছেন।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওতে প্রদর্শিত চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া এই ব্যক্তি নিহত হননি। তিনি বেঁচে আছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘Tarek Rahman’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৯ মে তারিখে প্রচারিত একটি ভিডিও পোস্ট পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে ভিডিওটি ভিন্ন কোণ থেকে ধারণকৃত একই ঘটনার দৃশ্য৷ 

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “আমরা কোন কিছু না বুঝে সবকিছু শেয়ার দেই এটা ঠিক না সম্পর্কে উনি আমার ফুপা উনি একজন আদম বেপারী কিছু ঝামেলার কারণে কয়দিন ধরে সমস্যা ছিল আজকে তাকে পেয়ে ট্রেনের মধ্যে মারধর করা শুরু করে পরে তিনি জীবন রক্ষাতে ট্রেন থেকে পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু তাকে জানে মারার চেষ্টা করে তার কাছে টাকা ছিল অনেক সেই টাকা তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় তারা_ আর ফেসবুকে তাকে চোর বানানো হয়েছে হায়রে সমাজ  বর্তমানে উনি বেঁচে আছেন কিন্তু এর পিছনে যাদের হাত আছে তাদের কঠোরতম শাস্তি দাবী জানাচ্ছি “। এছাড়াও কয়েকজন ব্যক্তির মন্তব্যের রিপ্লাইয়েও তিনি লিখেন, উক্ত ব্যক্তি বেঁচে আছেন।

Comparison : Rumor Scanner

পরবর্তীতে উক্ত তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত ১৯ মে “চলন্ত ট্রেন থেকে একজনকে ফেলে দেওয়ার ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে সংযুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার [১৮ মে] বেলা একটার দিকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর রেলস্টেশন এলাকায়। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান (৫২)। তিনি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পাড়ইল গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় বগুড়ায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মতিউর রহমান একজন আদম ব্যবসায়ী। তাঁর মাধ্যমে দুই বছর আগে সজীব নামের এক যুবক সৌদি আরবে যান। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় ইকামা (কাজের সুপারিশ সনদ) না পাওয়ায় সজীবের পরিবারের সঙ্গে মতিউর রহমানের বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে সজীবের নির্দেশে কয়েকজন যুবক গতকাল মতিউর রহমানকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। সজীবের বাড়ি বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালসন গ্রামে।

মতিউর রহমানের ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘বাবা গতকাল দুপুরে বগুড়া থেকে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস নামের একটি ট্রেনে সান্তাহারে আসতেছিলেন। আসার পথে নসরতপুর রেলস্টেশনে আসার আগে বাবার কামরায় থাকা ১০ থেকে ১২ যুবক বাবাকে মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে চলন্ত ট্রেনের দরজা দিয়ে তাঁরা বাবাকে নিচে ফেলে দেন। ট্রেন থেকে রেললাইনে পড়ে গেলেও ভাগ্য বলে ট্রেনের চাকা তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে যায়নি। তবে আঘাত লেগে একটা পা ভেঙে গেছে।’ আহসান হাবিব জানান, তাঁর বাবাকে উদ্ধার করে প্রথমে আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর মতিউর রহমান এখন বগুড়ায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।”

এছাড়াও, মূলধারার সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে গত ১৯ মে তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের সঙ্গে ভিডিওটিতে প্রদর্শিত পড়ে যাওয়া ব্যক্তি মতিউরের মুঠোফোনে কথা হয়। মতিউর ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন তাকে তার ছেলে ও স্ত্রী এক পর্যায়ে উদ্ধার করে ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বগুড়ায় ভর্তির পরামর্শ দেন।

এছাড়াও, এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম আজকের পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৯ মে রাতে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মতিউর রহমান (৪০) চিকিৎসা নিয়ে গত ১৯ মে সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে আহসান হাবিব।

সুতরাং, বগুড়ায় সম্প্রতি চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে গিয়ে বেঁচে যাওয়া জীবিত ব্যক্তিকে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img