আজারবাইজানে পাকিস্তানের পক্ষে স্লোগান দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

সাম্প্রতিক পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার সংঘাতের প্রেক্ষিতে অন্তত গত ১১ মে থেকে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আজারবাইজানের বাকু শহরের রাস্তায় উৎসবের আমেজ! পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণার পর আনন্দে ফেটে পড়েছে সবাই।..”।

উল্লেখ্য যে, উক্ত ভিডিওটিতে মানুষদের হাতে আজারবাইজান, পাকিস্তান ও তুরস্কের পতাকা দেখা যায় এবং ‘পাকিস্তান পাকিস্তান’ স্লোগান দিতে শোনা যায়।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের পাক-ভারত সংঘাতের প্রেক্ষিতে আজারবাইজানে পাকিস্তানের নামে স্লোগানের দৃশ্যের নয় বরং, ভিন্ন প্রসঙ্গের ২০২০ সালের ভিডিও আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে পাকিস্তানে নিযুক্ত সাবেক আজারবাইজানের রাষ্ট্রদূত ‘আলী আলীজাদা’র নামে পরিচালিত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়।

Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “আজারবাইজানের জনগণ সংহতি ও নৈতিক সমর্থনের জন্য পাকিস্তানকে সালাম ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে। সালাম পাকিস্তান” (অনূদিত)। এছাড়াও, ক্যাপশনে ‘৮ নভেম্বর ২০২০’ তারিখ এবং হ্যাশট্যাগে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়াও ইথিওপিয়ায় থাকা আজারবাইজানের দূতাবাসের নামে পরিচালিত ফেসবুক পেজে উক্ত স্থানের ভিন্ন একটি ভিডিও ২০২০ সালের ৯ নভেম্বরে প্রচার হতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, “গর্বিত আজারবাইজানিরা শহরের কেন্দ্রস্থলে জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন।” (অনূদিত)

পরবর্তীতে, উপরোল্লিখিত দিনে (৮ নভেম্বর ২০২০) আজারবাইজানের বাকুতে মানুষজনের আজারবাইজানের পতাকা নিয়ে উদযাপনের উপলক্ষের বিষয়ে অনুসন্ধান করলে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট মনিটর’ এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে আজারবাইজানের পতাকা হাতে মানুষদের উদযাপনের একটি ছবি সংযুক্ত করে ছবি সম্পর্কে বলা হয়, “আজারবাইজানের বাকু শহরে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর আর্মেনিয়ার দখল থেকে শুশা শহর মুক্ত হওয়ার পর আজারবাইজানি জনগণ উদযাপন করেন।…”

এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “আজারবাইজানের নেতা রবিবার [৮ নভেম্বর ২০২০] ঘোষণা করেন যে, আজারবাইজানের শহর শুশা আর্মেনীয় বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত হয়েছে, আনাদোলু সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। শুশা ১৯৯২ সালের ৮ মে আর্মেনীয় বাহিনী দখল করেছিল। এটি নাগর্নো-কারাবাখ বা ঊর্ধ্বস্থিত কারাবাখ অঞ্চল মুক্ত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিকভাবে এটি আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। শহরটি অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর খানকেন্দির পথে অবস্থিত।…” অর্থাৎ, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত উদযাপনটি মূলত উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে হয়েছিল।

সুতরাং, সাম্প্রতিক সময়ের পাক-ভারত সংঘাতের প্রেক্ষিতে আজারবাইজানে পাকিস্তানের নামে স্লোগানের দৃশ্য দাবিতে ভিন্ন প্রসঙ্গের ২০২০ সালের পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img