ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে গত ১২ এপ্রিল ঢাকায় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়। উক্ত কর্মসূচিতে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার সমর্থক দাবিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে কটাক্ষ করা হয় বলে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়াও, দেশের নানা জায়গায় নানাসময়ে সৌদি যুবরাজকে কটাক্ষ করার বিষয়ে শোনা যায়। সৌদি যুবরাজকে কটাক্ষ করার দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ সালমানকে অপমান করায় আকামা আছে কি না তা না দেখেই সৌদি আরবে ৬০ হাজার বাংলাদেশীকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সৌদি আরবে থেকে কাজ করতে হলে আকামার প্রয়োজন। আকামা হচ্ছে কাজের অনুমতিপত্র।

এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে কটাক্ষ বা অবমাননা করার দায়ে আকামার বিষয় না দেখেই সৌদি আরবে ৬০ হাজার বাংলাদেশীকে আটক করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করলে অ্যাকাউন্টটিতে প্রায় প্রতি সাতদিন পরপর একটি পরিসংখ্যান পোস্ট হতে দেখা যায়। এরূপ পোস্টে নিয়মভঙ্গকারী কতজনকে সৌদি আরব এক সপ্তাহে আটক করেছে তার একটি পরিসংখ্যান দেওয়া থাকে। পহেলা বৈশাখের পর প্রথমবারের মতো গত ১৯ এপ্রিলে এরূপ একটি পরিসংখ্যান পোস্ট করা হয়েছে। পরিসংখ্যানটিতে বলা হয়, গত ১ সপ্তাহে ২০,৬৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটককৃতদের অপরাধ হিসেবে আবাসন আইন ভঙ্গ, শ্রম আইন ভঙ্গ, সীমান্ত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গ, আইনভঙ্গকারীদের সহায়তা, সীমান্ত পেরিয়ে সৌদি আরবে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা, সৌদি আরব থেকে অবৈধভাবে পালানোর চেষ্টা এসব অপরাধ উল্লেখ আছে। কোথাও বাংলাদেশে সৌদি যুবরাজকে অবমাননার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, মোট আটককৃতদের জাতীয়তার কোনো অনুপাতও উল্লিখিত পরিসংখ্যান পোস্টে উল্লেখ করা হয়নি। কেবলমাত্র সীমান্ত পেরিয়ে সৌদি আরবে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে আটক হওয়া ১২৬৪ জনের জাতীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে যার মধ্যে প্রায় প্রায় ৯৭ শতাংশই ইথিওপিয়ান ও ইয়েমেনি।
এরকম গত ৫ টি পোস্ট (১, ২, ৩, ৪, ৫), তথা প্রায় শেষ ৫ সপ্তাহের গ্রেফতার হওয়া পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করেও আলোচিত দাবির সপক্ষে কোনো কিছুরই উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, বাংলাদেশে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে কটাক্ষ বা অবমাননা করার দায়ে আকামার বিষয় না দেখেই সৌদি আরবে ৬০ হাজার বাংলাদেশীকে আটক করার দাবিটি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
তথ্যসূত্র
- Ministry of Interior, Saudi Arabia – X Post
- Rumor Scanner’s analysis