গত ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘায় ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে রুহুল আমিন (৬০) নামে এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেন। এরই প্রেক্ষিতে ‘কে ভেবেছিল সে এমন করবে, ঘটনা রাজশাহীতে, ওই বৃদ্ধের স্ত্রী ৮ মাস আগে মারা যায়। এরপর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে কিছুদিন বাবাকে রাখার পর আর রাখতে চায়না ওনাকে। এ নিয়ে অনেক ঝগড়া। এমনও রাত গেছে বৃদ্ধ সারারাত উঠানে ছিল ছেলেরা দরজা খুলেনি। মৃত্যুর দিন সকালে দুই ছেলের বৌয়ের সাথে খুব ঝগড়া হয় এবং তাকে বেরিয়ে যেতে বলে, ছেলেরাও তার জিনিশপত্র উঠানে ফেলে দেয়। এরপর স্টেশনে ভোর থেকে বসে ছিল। কিছু খাননি। দুপুরে চলন্ত ট্রেনের সামনে শুয়ে পড়েন।’ শীর্ষক শিরোনামে তার আত্মহত্যার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও দুই মেয়েদের অত্যাচারে আত্মহত্যা করেননি বৃদ্ধ এবং তার স্ত্রীও মৃত নয় বরং তার দুটি সন্তান, এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং তার স্ত্রীও বেঁচে আছেন। প্রচারিত গল্পটি গুজব।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ১৬ এপ্রিল ‘রাজশাহীতে পেঁয়াজচাষির আত্মহত্যা নেটিজেনরা ‘ধুয়ে দিচ্ছে’ পরিবারকে, বাস্তবতা ভিন্ন’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মীর রুহুল আমিনের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামে। বাড়িতে গিয়ে জানা যায় তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেঁচে আছেন। ফেসবুকে নিজের মারা যাওয়ার খবর দেখে তিনি হতভম্ব। ফেসবুকে বলা হচ্ছে তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে কিন্তু বাস্তবে তাঁদের দুটি সন্তান, এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের ২০-২২ বছর আগে বিয়ে হয়েছে, শ্বশুরবাড়ি ঈশ্বরদীতে। ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে স্বল্প বেতনের চাকরি করেন, থাকেন সেখানেই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মীর রুহুল আমিনের খুবই ভালো সম্পর্ক। স্থানীয় তিনটি বেসরকারি সংস্থা থেকে যথাক্রমে ৫০ হাজার, ৬৪ হাজার ও ৮০ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন মীর রুহুল আমিন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ৪ হাজার ৪৫০ টাকা কিস্তি দিতে হতো। এখনো ৯৯ হাজার ২৯০ টাকা ঋণ অবশিষ্ট রয়েছে। মীর রুহুল আমিনের ভাতিজা মীর মোফাক্কর হোসেন জানান ঋণ শোধ করার দুশ্চিন্তায় তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।
একই বিষয়ে দেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন (১, ২) প্রকাশ করেছে।
সুতরাং, আলোচিত ভিডিওতে স্ত্রীর মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও দুই মেয়েদের অত্যাচারে আত্মহত্যার দাবিটি মিথ্যা।