শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে একাধিক গণমাধ্যমের নামে ভুয়া স্ক্রিনশট প্রচার

গত বছরের ০৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি মারা গেছেন দাবিতে এনডিটিভি, প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ পোস্টের আদলের কিছু স্ক্রিনশট সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে এনডিটিভি বা প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। মূলত, উক্ত গণমাধ্যমগুলোর ফেসবুক পেজের পোস্টের স্ক্রিনশটের আদলে প্রযুক্তির সাহায্যে স্ক্রিনশটগুলো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে; যা স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই প্রচার করছেন।

অনুসন্ধানে শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কথিত স্ক্রিনশটগুলো অনুযায়ী এনডিটিভির প্রায় ২ ঘন্টা আগের পোস্ট, আনন্দবাজার পত্রিকার প্রায় ৫৬ মিনিট আগের পোস্ট, বিবিসি বাংলার প্রায় ১৪ মিনিট এবং প্রথম আলোর প্রায় ৮ মিনিট আগের পোস্ট। এছাড়াও, প্রথম আলোর কথিত স্ক্রিনশটি অনুযায়ী সংবাদটি এনডিটিভির বরাতে প্রচার করা হয়েছে।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারা গেলে তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হবে এটা স্বাভাবিক কিন্তু প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন কোনো তথ্য মেলেনি।

এনডিটিভির ফেসবুকে পেজের দাবিতে কথিত স্ক্রিনশট যাচাই

এনডিটিভির কথিত স্ক্রিনশটে #BREAKING হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লেখা হয়, “Bangladeshi Former Prime Minister Sheikh Hasina is no more.”

এই বিষয়ে এনডিটিভির অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন কিওয়ার্ড এবং এডভান্স সার্চ করেও এনডিটিভির এমন কোনো পোস্ট বা সংবাদ পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। এনডিটিভির ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা ইস্যুতে সর্বশেষ গত ২১ মার্চ সংবাদ প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়। যাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে এর নেতৃত্বের মধ্যে যারা হত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত, তাদের দেশের আদালতে বিচার করা হবে।

এই প্রতিবেদনে আলোচিত দাবিটির বিষয়ে কোনো তথ্য মেলেনি। পরবর্তী অনুসন্ধানে ইন্টারনেট আর্কাইভ যাচাই করেও এনডিটিভিতে উক্ত দাবিতে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, প্রচারিত দাবিতে কথিত এই স্ক্রিনশট ছাড়া আর কোনো স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদি এনডিটিভি এমন কোনো সংবাদ প্রচার করতো তাহলে ইন্টারনেটে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যেত।

অর্থাৎ, শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে এনডিটিভির নামে প্রচার করা কথিত এই স্ক্রিনশট ভুয়া এবং প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা।

আনন্দবাজার পত্রিকার ফেসবুকে পেজের দাবিতে কথিত স্ক্রিনশট যাচাই

কথিত স্ক্রিনশটে  #ব্রেকিং হ্যাশট্যাগ ব্যাবহার করে লেখা হয়, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর নেই।’ এছাড়াও বলা হয়, ‘বিস্তারিত প্রথম কমেন্টে’।

এই বিষয়ে আনন্দবাজার পত্রিকার ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন কিওয়ার্ড এবং এডভান্স সার্চ করেও আনন্দবাজার পত্রিকার এমন কোনো পোস্ট বা সংবাদ পাওয়া যায়নি। পত্রিকাটির ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করেও এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনা ইস্যুতে সর্বশেষ গত ২৩ মার্চ সংবাদ প্রকাশের তথ্য পাওয়া যায়। ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশে হাসিনা-বিরোধী ক্ষোভ গোচরে ছিল, কিন্তু দিল্লি হস্তক্ষেপ করেনি: সংসদীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেট আর্কাইভ যাচাই করেও আনন্দবাজার পত্রিকার কথিত স্ক্রিনশট/সংবাদ বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, প্রচারিত দাবিতে কথিত এই স্ক্রিনশট ছাড়া আর কোনো স্ক্রিনশট খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদি আনন্দবাজার পত্রিকা এমন কোনো সংবাদ প্রচার করতো তাহলে ইন্টারনেটে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যেত।

অর্থাৎ, শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে আনন্দবাজার পত্রিকার নামে প্রচার করা কথিত এই স্ক্রিনশট ভুয়া এবং প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা।

BBC News বাংলা এর দাবিতে কথিত স্ক্রিনশট/ফটোকার্ড যাচাই

বিবিসি নিউজ বাংলার ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর নেই’ শীর্ষক শিরোনামের কথিত এই ফটোকার্ডটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, বিবিসি নিউজ বাংলার প্রচলিত ফটোকার্ডের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটির ফন্টে অমিল রয়েছে।

অর্থাৎ, বিবিসি নিউজ বাংলার নামে প্রচারিত এই স্ক্রিনশট ভুয়া।

প্রথম আলোর ফেসবুক পেজের কথিত স্ক্রিনশট যাচাই

#ব্রেকিং হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে লেখা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর নেই। আজ সকালে দিল্লির একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি খবরটি নিশ্চিত করেছে। বিস্তারিত আসছে…’

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, প্রথম আলোর ওয়েবসাইটেও আলোচিত বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ইন্টারনেট আর্কাইভ যাচাই করেও প্রথম আলোর নামে প্রচারিত কথিত স্ক্রিনশট/সংবাদ বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, প্রচারিত দাবিতে কথিত এই স্ক্রিনশট ছাড়া আর কোনো স্ক্রিনশট খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদি প্রথম আলো এমন কোনো সংবাদ প্রচার করতো তাহলে ইন্টারনেটে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের স্ক্রিনশট খুঁজে পাওয়া যেত।

অর্থাৎ, শেখ হাসিনা মারা গেছেন দাবিতে প্রথম আলো নামে প্রচার করা কথিত এই স্ক্রিনশট ভুয়া এবং প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা।

এছাড়া, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পেজ, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এক্স অ্যাকাউন্ট এবং আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে শেখ হাসিনার মৃত্যুর দাবি সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে, ‘Dark Stories Of Student Politics In DU’ ও ‘60 Second Study’ পেজ থেকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সিংহভাগ মন্তব্যকারী ‘শেখ হাসিনা মারা গেছেন’ শীর্ষক কথিত দাবিটি স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে নিয়েছেন।

সুতরাং, এনডিটিভি, প্রথম আলো, বিবিসি বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা এর ফেসবুক পেজে প্রচারিত সংবাদ পোস্টের আদলে প্রচারিত স্ক্রিনশটগুলো ভুয়া এবং সেগুলো স্যাটায়ার বা ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img