গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে সুমন মিয়া ওরফে টেলি সুমন (৩৩) নামের এক ব্যক্তিকে গত ২০ মার্চ রাত ৯টার দিকে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এরই প্রেক্ষিতে অন্তত গত ২১ মার্চ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “২ ঘন্টা আগে গুলশান পুলিশ প্লাজার সামনে একজন কে গুলি করে খু/ন এখন হাতিরঝিলে গুলি করে খু/ন।”
ভিডিওর সংযুক্তি ছাড়াও কেবলমাত্র টেক্সট আকারেও আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।

এরূপ দাবিতে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গুলশান পুলিশ প্লাজার কাছে একজন কে গুলি করে খুন করার ২ ঘন্টা পর হাতিরঝিলে আরেকজনকে গুলি করে খুন করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, গুলশানের উল্লিখিত পুলিশ প্লাজাটি হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। উক্ত এলাকায় গত ২০ মার্চ রাতে একজনকেই প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত পোস্টে দাবিটির সপক্ষে একটি ভিডিও প্রতিবেদন সংযুক্ত করতে দেখা যায়। প্রচারিত ভিডিওটির বিবরণীতে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘কালের কণ্ঠ’ এর নাম উল্লেখ করতে শোনা যায়। উক্ত সূত্র ধরে গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করলে গত ২১ মার্চে “প্রকাশ্যে হাতিরঝিলে গু**লি করে হ**ত্যা। কী হয়েছে সেখানে? সরাসরি…” শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচার ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে সাদৃশ্য পাওয়া যায় এবং নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত ভিডিওটি কালের কণ্ঠের প্রচারিত উক্ত ভিডিওটি থেকেই নেওয়া হয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে বলা হয়, নিহত ব্যক্তির নাম সুমন যে টেলিসুমন নামেও পরিচিত এবং তাকে হাতিরঝিল সংলগ্ন এবং গুলশানে যাওয়ার প্রবেশদ্বারে অবস্থিত পুলিশ প্লাজার পাশে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আগে হত্যাকারীদের সাথে তার বাকবিতণ্ডা ও ধ্বস্তাধস্তি হয়।
উক্ত সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে গত ২০ মার্চে “গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে গুলিতে যুবক নিহত” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “রাজধানী ঢাকার গুলশানে সুমন (৩৫) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাত ৯টার দিকে হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজার পাশে এ ঘটনা ঘটে।” অর্থাৎ, উল্লিখিত তথ্যানুযায়ী, নিহত হওয়া ব্যক্তি সুমনকে গুলশানে হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজার পাশে হত্যা করা হয়েছে।
একই তথ্যে সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রথম আলো ও যুগান্তরসহ অন্যান্য গণমাধ্যম। অর্থাৎ হত্যার ঘটনা মূলত পৃথক দুইটি ঘটনা দাবি করা হলেও নিহত হওয়া ব্যক্তি, ব্যক্তির নাম ও আনুষঙ্গিক বর্ণনা একই বলে পরিলক্ষিত হয়।
তাছাড়া, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে গণমাধ্যম বা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে একইদিনে দুই ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে হাতিরঝিল ও গুলশানে পৃথক দুইটি প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড ঘটার বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে গুগল ম্যাপে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, হাতিরঝিল সংলগ্ন পুলিশ প্লাজা বা গুলশানে যাওয়ার প্রবেশদ্বারের পুলিশ প্লাজা বলে উল্লিখিত স্থান মূলত একই স্থান।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমানের সাথে। তিনি নিশ্চিত করেন, গুলশানে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা একটিই ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির নাম সুমন। হাতিরঝিল তার থানার অধীনে না থাকায় হাতিরঝিলে এরকম কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে তার জানা নেই।
পরবর্তীতে হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গুলশান থানার অধীনে পুলিশ প্লাজার উক্ত ঘটনা ছাড়া তার থানার অধীনে হাতিরঝিল বা হাতিরঝিল সংলগ্ন এলাকায় এরকম আর কোনো ঘটনা ঘটার বিষয়ে তিনি শোনেননি।
সুতরাং, গত ২০ মার্চে গুলশান পুলিশ প্লাজার কাছে সুমন নামে এক ব্যক্তি হত্যার ঘটনাকে গুলশান ও হাতিরঝিলে পৃথক দুই ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Kaler Kantho – Facebook Post
- Dhaka Tribune – গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে গুলিতে যুবক নিহত
- Prothom Alo – গুলশানে পুলিশ প্লাজার সামনে যুবককে গুলি করে হত্যা
- Jugantor – ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব, গুলশানে দুর্বৃত্তের গুলিতে ব্যবসায়ী খুন
- Statement of Mahmdur Rahman, OC, Gulshan Police Station
- Statement of Md Raju, OC, Hatirjheel Police Station