প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ইসরায়েল হামলা শুরু করে। হামলা শুরুর পর থেকে তিন দিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের হিসাবমতে, ২০০ শিশুসহ ৫০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৯০৯ জন। এরই প্রেক্ষিতে ‘সুবাসিত ফুল, তুমি তো জান্নাতি! এই নির্মম পৃথিবী তোমার পায়ের ধূলিতেও স্থান পাওয়ার যোগ্য নয়.!’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি গাজায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনার নয় বরং, এটি ২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় নিহতের ঘটনার ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘أرشيف الثورة السورية’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট “তাই আমরা ভুলি না.. সিরিয়ার সরকার কর্তৃক পূর্ব ও পশ্চিম ঘৌতায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলা চালানোর পর দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে এই দিনে নিহত কিছু শহীদের ছবি এগুলো।” ( অনুদিত) শীর্ষক ক্যাপশনে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবুহু মিল রয়েছে।

পোস্টটির ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ (এপ্রিল) সিরিয়ার ঘৌতায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ নিহত হয় যার মধ্যে বেশিরভাগ ই শিশু ছিল। উক্ত পেজটি মূলত সিরিয়ার হামলার ঘটনাগুলোকে আর্কাইভ হিসেবে সংরক্ষণ করার জন্য ই আলোচিত পেজে বিভিন্ন ছবি, ভিডিও প্রকাশ করে থাকে। এর ই ধারাবাহিকতায় তারা সিরিয়ার ওই নৃশংস হামলার স্মরণে আলোচিত ভিডিওটি প্রকাশ করে।
উক্ত পোস্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ‘Report of the United Nations Mission to Investigate Allegations of the Use of Chemical Weapons in the Syrian Arab Republic on the alleged use of chemical weapons in the Ghouta area of Damascus on 21 August 2013 : note / by the Secretary-General’ শীর্ষক শিরোনামে জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট সিরিয়ার দামেস্কর উপকণ্ঠ ঘৌটায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক হামলায় সারিন গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে।
সেসময় উক্ত ঘটনা নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ (১,২) করে।
অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি ২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র হামলার ঘটনার।
সুতরাং, ২০১৩ সালে সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় নিহতের ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- أرشيف الثورة السورية – Facebook Post
- Digitallibrary.un.org – Report of the United Nations Mission to Investigate Allegations of the Use of Chemical Weapons in the Syrian Arab Republic on the alleged use of chemical weapons in the Ghouta area of Damascus on 21 August 2013 : note / by the Secretary-General
- Bangla Tribune – সিরিয়ার সরকারি অস্ত্রাগারেই গৃহযুদ্ধে ব্যবহৃত রাসায়নিক অস্ত্রের সন্ধান
- Human Rights Watch – Attacks on Ghouta