সম্প্রতি হোলি উৎসবকে কেন্দ্র করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি গাড়িতে থাকা দুই ব্যক্তিকে মারধর এবং তাদের গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে “অসাম্প্রদায়িকতার সবক দেওয়া ভারতে মুসলমানদের অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে তার একটি ছোট্ট নমুনা!” শীর্ষক ক্যাপশনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, হামলার শিকার ব্যক্তিরা মুসলিম ধর্মাবলম্বী

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে ইন্সটাগ্রাম প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি ভারতে হোলি উৎসবে মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও নয়। বরং, রঙ লাগানো নিয়ে বিরোধের জেরে দিল্লিতে রাজু কুমার ও রাজেশ নামে দুই হিন্দু ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও।
এই বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতীয় পত্রিকা হিন্দুস্তানের ওয়েবসাইটে গত ১৫ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে একই ভিডিওর কিছু স্থিরচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দিল্লির দ্বারকার গোয়লা ডেইরি এলাকার ছঠ পার্কে হোলি খেলাকে কেন্দ্র করে দুই যুবক মারধরের শিকার হয়েছেন। শুক্রবার হোলি উদ্যাপনের সময় ভুলবশত এক স্থানীয় যুবকের গায়ে রঙ পড়ে গেলে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে ভুক্তভোগী রাজু কুমার (৩৫) ওই যুবককে চড় মারেন। পরে সে ৪-৫ জন সঙ্গী নিয়ে ফিরে এসে রাজু ও তার বন্ধু রাজেশকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে এবং রাজুর ট্যাক্সি ভাঙচুর করে। এসময় রাজুর মাথায় আঘাত করে তাকে এত মারধর করা হয় যে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন রাজু থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা স্থানীয় বাসিন্দা এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।.

উক্ত প্রতিবেদনে ‘Rockky’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্টের বরাতে ঘটনাটির ভিডিও যুক্ত করা হয়, যা দাবিকৃত ভিডিওর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
এ বিষয়ে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমেও অনুরূপ তথ্য পাওয়া যায়। (১,২,৩)
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ ভারতের উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলায় মসজিদে যাওয়ার পথে হোলির রঙ মাখানোকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে শরীফ নামের এক মুসলিম ব্যক্তি হামলার শিকার হয়ে মারা যান বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে উন্নাও পুলিশের দাবি, মৃত ব্যক্তির শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তাঁর মৃত্যু হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) হয়ে হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় অন্যান্য দিক গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সুতরাং, ভারতে হোলি উৎসবে বিরোধের জেরে হিন্দু ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিও মুসলিম ব্যক্তিকে মারধরের দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।