হাতিরঝিলে অস্ত্রের মুখে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি সাজানো

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “দিনে দুপুরে অস্ত্রের মুখে প্রকাশ্যে বাইক ছিনতাই”। কিছু পোস্টে ঘটনাটির স্থান হিসেবে ঢাকার হাতিরঝিল বলা হয়েছে।

প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে দেখা যায়, অস্ত্র ঠেকিয়ে কয়েকজন ছিনতাইকারী সদৃশ ব্যক্তি একজনের বাইক ছিনতাই করছেন।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।

উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি আসল ছিনতাইয়ের নয় বরং জনসচেতনতামূলক উদ্দেশ্যে নকল অস্ত্র দিয়ে ধারণকৃত একটি স্ক্রিপ্টেড ভিডিওয়ের দৃশ্যকে আসল ছিনতাইয়ের দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘সাকিব রাজ’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রচারিত একটি পোস্টে প্রচারিত ভিডিওটির একটি দীর্ঘায়িত সংস্করণের সংযুক্তি পাওয়া যায়। 

Comparison : Rumor Scanner

ভিডিওটির শুরুতে আলোচিত দাবির সঙ্গে প্রচারিত দৃশ্যটি দেখা যায়। ভিডিওটির শেষ অংশে কথিত ছিনতাইকারী ও ভুক্তভোগী উভয়েই জানান, এটি একটি জনসচেতনতামূলক ভিডিও, যা শুধুমাত্র সতর্কতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং এটি কোনো বাস্তব ঘটনা নয়। ভিডিওটির মূল লক্ষ্য ছিল পাঠাও চালকদের সতর্ক করা, বিশেষ করে যারা নিরিবিলি বা নির্জন স্থানে চলাচল করেন। এছাড়া, প্রচারিত পোস্টটির ক্যাপশনেও উল্লেখ করা হয়েছে,  “এটি একটি সতর্কতামূলক ভিডিও, যা দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি। দয়া করে এটি সত্যি হিসেবে নেবেন না।”

এছাড়া, উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি পর্যবেক্ষণ করলে গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) উক্ত অ্যাকাউন্টটিতে আরেকটি ভিডিও প্রচার করতে দেখা যায় যেখানে কথিত ছিনতাইয়ের দৃশ্যটি ধারণ করার আগের মূহুর্ত দেখা যায় এবং বলা হয় যে তারা এখন একটি জনসচেতনতামূলক ভিডিও হিসেবে ছিনতাইয়ের অভিনয় করবে। তাছাড়া, কথিত ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ব্যক্তিকেও উক্ত ভিডিওটিতে প্রস্তুত আছে কি না জিজ্ঞেস করা হয়। উক্ত পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “এখানে একটা সতর্কতা মূলক ভিডিও করার জন্য কাজ করা হয়েছিল | কিন্তু কিছু মানুষ এই ভিডিওটাকে অল্প একটু ক্রপ করে ফুল ভিডিওটা না ছেড়ে সেটা ভাইরাল করে দেয় | ভাই আমরা কোন ছিনতাইকারী না আমরা content creator | দেশের পরিস্থিতি এখন যেভাবে যাচ্ছে সেই ক্ষেত্রে এখন যেভাবে ছিনতাই ডাকাতি হচ্ছে ওইটার উদ্দেশ্যে আমরা একটা ভিডিও বানিয়ে ছিলাম দেশবাসীর জন্য | দেশবাসীকে সতর্ক করার জন্য | কিন্তু ভাই আপনারা তো আমাদেরকেই ছিন্তাইকাড়ি বানায় দিলেন | প্লেস এগুলা করা বন্ধ করেন কেউ আজেবাজে ভাবে ভিডিওটা পোস্ট করবেন না”।

তাছাড়া, প্রচারিত ভিডিওটি স্ক্রিপ্টেড জানিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকেও গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রেস বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করা হয়েছে। উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “….হাতিরঝিলে ওভারপাসের নিচে ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ চার যুবকের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে সেটি আসলে প্রকৃত কোন ছিনতাই এর ঘটনা নয়। এটি একটি সতর্কতামূলক ভিডিও তৈরির শুটিংয়ের দৃশ্য। কয়েকজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কর্তৃক রাজধানীতে পাঠাও চালকদের নির্জন স্থানে অবস্থানকালে ছিনতাইয়ের ব্যাপারে সতর্ক করার উদ্দেশে সচেতনতামূলক একটি ভিডিও নির্মাণের অংশ হিসেবে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রি.) সকাল আনুমানিক ১১:০০ ঘটিকার দিকে হাতিরঝিলের ২ নম্বর ব্রিজের মহানগর পূর্ব পাশের এলাকায় দৃশ্যটি ধারণ করা হয়। ভিডিও তৈরিতে যে পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও একটি খেলনা পিস্তল। জনসচেতনতামূলক ভিডিওটি তৈরি করে ফেইসবুকে পোস্ট করলে পরবর্তীতে কেউ কেউ সেই ভিডিওর খন্ডিতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছিনতাইয়ের ঘটনা হিসেবে ছড়িয়ে দেয়।…”

সুতরাং, জনসচেতনতামূলক উদ্দেশ্যে তৈরি ছিনতাইয়ের স্ক্রিপ্টেড অভিনয়ের দৃশ্যকে আসল ছিনতাই দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img