শনিবার, মে 24, 2025

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির হিন্দু বাড়ির আগুনের ঘটনাকে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার

সম্প্রতি, হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা দাবিতে বেশকিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পোস্টগুলোর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “হিন্দু’র বাড়ি পুড়ছে, এটা কাফির মত সংখ্যাগুরু মুসলিমের বাড়ি না। তাই মিডিয়া এখানে নিশ্চুপ। এটাই বাংলাদেশি মিডিয়া, ছিঃ ধিক্কার আপনাদের। 

দুটি সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার দুষ্কৃতীকারীদের আগুনে সর্বশান্ত হয়ে গেছে। মেয়ের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বিয়ের সমস্ত বাজার ঘরে, বাদ যায়নি বিয়ের শাড়িটাও। একমাত্র আয়ের উৎস ভ্যানটিও পুড়ে ছাই। উল্লেখ্য, গতকাল পিরোজপুরের ডুমুরিতলা, শারিকতলা ইউনিয়নের, সাহা পারায় রাতের অন্ধকারে সমীর সাহা এবং কালা সাহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের ভাষ্যমতে রাতের আঁধারে দুষ্কৃতীকারীরা তাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

তারা অভিযোগ করেছে রাতের অন্ধকারে ঘরের চারপাশ থেকে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার উদ্দেশ্য ছিল দুষ্কৃতীকারীদের। এই বাড়িতে গত মাসেও একবার আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় দুষ্কৃতীকারীদের চেষ্টা সফল হয়েছে।”

আগুনের ঘটনা

এমন দাবির কিছু পোস্ট এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত স্থানে উল্লিখিত ব্যক্তিদের বাড়িতে আগুনের ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত বছরের (২০২৪) ফেব্রুয়ারির একটি ঘটনাকে সাম্প্রতিক হিসেবে নতুন করে প্রচারের ঘটনা ঘটেছে।

অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একই ধরনের ক্যাপশনে এবং ছবির বিভিন্ন পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। গৌতম হালদার নামের একটি ফেসবুক আইডির ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির একটি পোস্টে একই ছবিগুলো হুবহু একই ক্যাপশনে পাওয়া যায়। যার মাধ্যমে ঘটনাটি গত বছরের বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে উক্ত ঘটনার ওপর বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ঢাকা মেইল-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ওইদিন ভোররাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম ডুমরিতলা গ্রামে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে তিনটি বাড়ি পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন ভ্যানচালক দিপঙ্কর সাহা কালা, মৃনাল কান্তি সাহা ও সুকান্ত সাহা। আগুনে দিপঙ্করের ভ্যানসহ ঘরের সবকিছু ভস্মীভূত হয়।

প্রতিবেদনে দিপঙ্কর সাহার বক্তব্য উদ্ধৃত করে লেখা হয় “রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে ঘরের মধ্যে আগুন দেখতে পেয়ে আমি চিৎকার দিই। তখন ঘরের প্রায় সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশের মন্দিরসহ আত্মীয় মৃনাল কান্তি সাহা ও সুকান্ত সাহার ঘরেও আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা। কয়েক দিন আগেও তারা আমাদের ঘরে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল।”

এ বিষয়ে দিপঙ্কর সাহা কালার সঙ্গে মুঠোফোনে রিউমর স্ক্যানার এর কথা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঘটেছে। তবে কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি বলে তিনি জানান।

সুতরাং, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একটি আগুনের ঘটনাকে সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img