শেখ হাসিনার ভারত থেকে ভাষণ দাবিতে সম্পাদিত ভিডিও প্রচার 

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলের। সেদিন দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি শেখ হাসিনা ভারত থেকে ভাষণ দিয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। যেখানে তিনি পদত্যাগ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন এমন দাবিও করা হয় পোস্টগুলোর শিরোনামে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ইউটিউবে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

টিকটকে প্রচারিত একই ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।  

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। বরং, জুলাই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদানের একটি ভিডিওর সাথে ভারতের পুরোনো ও ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার দুটি ভিডিওর ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে এতে আলোচিত ভিডিওটিতে শেখ হাসিনাকে, ‘তোমরা রাজাকার, তোমার বাবা রাজাকার এটাতো তোমরাই করেছ। চেয়েছিলাম অধিকার হয়েগেছি রাজাকার। আরে রাজাকার আমিতো তোমাদের বলিনাই, তোমরা নিজেরা স্লোগান দিয়ে তোমাদেরকে রাজাকার’ শীর্ষক কথাগুলো বলতে শোনা যায়। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি ফুটেজের পাশাপাশি দর্শকদের আরেকটি ফুটেজ দেখতে পাওয়া যায়।

ভিডিও যাচাই ১

আলোচিত ভিডিওতে দেখতে পাওয়া শেখ হাসিনার বক্তৃতা দেওয়ার ভিডিওটি অনুসন্ধানে ইংরেজি জাতীয় দৈনিক The Daily Star এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে উক্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে একই বক্তব্য প্রদান করতে দেখা যায়। এছাড়াও উভয় ভিডিওতে তার পরিহিত শাড়ি, বুকে থাকা বঙ্গবন্ধুর ছবি খচিত ব্যাজ এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মিল রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, আলোচিত ভিডিওতে শেখ হাসিনার সামনে থাকা বিজেপির লোগো সম্বলিত মঞ্চের অবয়বটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বসানো হয়েছে। 

এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত বছর জুলাই মাসে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার রামপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আন্দোলনকারীদের আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। উক্ত ভিডিওটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে তার কথা বলার সময় ধারণ করা। 

অর্থাৎ, আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে শেখ হাসিনার ভারত থেকে ভাষণ দেওয়ার নয়।

ভিডিও যাচাই ২

আলোচিত ভিডিওতে থাকা নরেন্দ্র মোদির ফুটেজটির বিষয়ে অনুসন্ধানে ভারতের গণমাধ্যম NDTV Profit এর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ৭ জুন WATCH: In Nitish Kumar’s Speech At NDA Meet, Reaffirmation For BJP & A Taunt For Congress শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে আলোচিত ভিডিওর নরেন্দ্র মোদির ফুটেজের সাথে উক্ত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওটি থেকে জানা যায়, এটি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সংসদীয় দলের বৈঠকের ভিডিও। যেখানে জোট দলগুলোকে নরেন্দ্র মোদিকে ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, উক্ত ভিডিওটির সাথে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কোনো সম্পর্ক নেই। 

ভিডিও যাচাই ৩

সর্বশেষ ভিডিওতে দেখতে পাওয়া আরেকটি ফুটেজ অনুসন্ধানে নরেন্দ্র মোদির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবর LIVE: PM Modi inaugurates ITU World Telecommunication Standardization Assembly শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

Video Comparison by Rumor Scanner 

ভিডিওটি পর্যালোচনা করে উক্ত ভিডিওটি বেশ কিছু অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওর বিভিন্ন ফুটেজের মিল পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিডিওটির বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নয়াদিল্লিতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন, ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন অ্যাসেম্বলি উদ্বোধন করার ভিডিও।

অর্থাৎ, ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় নির্মিত একটি ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।

সুতরাং, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে ভাষণ দিচ্ছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img