সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একজন আহত ব্যক্তির ছবিসহ দাবি প্রচার করা হয়েছে, “আমার দেশ সাংবাদিকের উপর হামলা জামায়েত শিবির এর নেতা কর্মি।”
তথা, প্রদর্শিত আহত ব্যক্তি আমার দেশ পত্রিকার একজন সাংবাদিক এবং তাকে জামায়াত-শিবির এর নেতাকর্মীরা হামলা করেছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত উপরোল্লিখিত পোস্টগুলোতে সম্মিলিতভাবে প্রায় ১৫ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আমার দেশ এর সাংবাদিক ইউনুছ শরীফের ওপর হামলাকারী ব্যক্তিরা জামায়েত শিবির এর নেতা কর্মী নয়। প্রকৃতপক্ষে কোনোরকম নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডে কোনো গণমাধ্যমের লোগো বা নামেরও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সাধারণত কোনো গণমাধ্যম কোনো ফটোকার্ড প্রকাশ করে থাকলে, প্রচারিত ফটোকার্ডে গণমাধ্যমটির নাম বা লোগোর সংযুক্তি থাকে৷ তবে, প্রচারিত উক্ত ফটোকার্ডটিতে এমন কোনো গণমাধ্যমের নাম বা লোগোর উল্লেখ পাওয়া যায়নি, যা থেকে বুঝা যায় যে আলোচিত ফটোকার্ডটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টে সংযুক্ত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভোলা জেলা প্রতিনিধি ইউনুছ শরীফের।

এরই সূত্র ধরে অনুসন্ধান করলে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ২৯ ডিসেম্বরে “ভোলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা, ধরাছোঁয়ার বাইরে সন্ত্রাসীরা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ভোলা শহরে তাবলীগ জামায়াতের জোবায়ের-সমর্থিত ওলামা মাসায়েখ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাদবিরোধী সমাবেশ চলাকালে সংবাদ সংগ্রহের সময় স্বেচ্ছাসেবীদের হামলার শিকার হন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভোলা জেলা প্রতিনিধি ইউনুছ শরীফ। হামলায় তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে আশঙ্কাজনক আবস্থায় তাকে ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। গত ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় ভোলা শহরের সদর রোডে বরিশাল দালানের সামনে এ ঘটনা ঘটে। […] চকবাজারের মাথায় বরিশাল দালানের সামনে ফুটপাতে কতিপয় মহিলা পথচারী আটকে পড়লে সংবাদ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভোলা জেলা প্রতিনিধি ইউনুছ শরীফ সমাবেশের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের মহিলা পথচারীদের পথ ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবীরা পথচারীদের পথ ছাড়তে রাজি না হয়ে প্রথমে বাকবিতণ্ডা ও পরে হাতাহাতি শুরু করেন। এ সময় রিয়াজ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী পাশ থেকে এসে হঠাৎ ওই সাংবাদিকের মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করেন। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পাশে থাকা অপর সংবাদকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ভোলা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।”
একই তথ্য গত ২৫ ডিসেম্বরে ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়।
এ বিষয়ে আমার দেশের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “আমার দেশের প্রতিনিধির ওপর হামলার ঘটনায় তাবলিগ জামাতের কেউ জড়িত নন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মিডিয়া বিভাগের সাথী হাবিবুল্লাহ রায়হান।”
এ বিষয়ে জানতে রিউমর স্ক্যানার টিম যোগাযোগ করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভোলা জেলা প্রতিনিধি ইউনুছ শরীফের সাথে। তিনি আলোচিত দাবিটি ভুয়া নিশ্চিত করে জানান, হামলাকারীরা জামায়াত-শিবির কর্মী নয়। এ বিষয়ে দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য সত্য। অর্থাৎ, ভোলা শহরে তাবলীগ জামায়াতের জোবায়ের-সমর্থিত ওলামা মাসায়েখ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাদবিরোধী সমাবেশ চলাকালে স্বেচ্ছাসেবীদের হামলার শিকার হয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আবু সাহাদাৎ মোঃ হাচনাইন পারভেজের সাথেও যোগাযোগ করে। তিনি জানান, এটি ভোলা শহরে তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে জোবায়েরপন্থীদের সমাবেশে ঘটেছে৷ এটির সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এখনও পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য যে, এই বিষয়ে কয়েকটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে, “আজকের (ঘটনার দিনের) প্রোগ্রামে আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক ইউনুস শরীফ এর সাথে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার বিবরণ। রাস্তা বন্ধ থাকার পরও উনি ঐদিক দিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। সেচ্ছাসেবকরা বাধা দিলে এই সাংবাদিক তাদের পাগড়ি ধরে টান দেন। এক পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ স্টেজ থেকে বারবার তাকে মাইকে ডাকলেও তিনি স্টেজে না এসে সেচ্ছাসেবকদের সাথে বাড়াবাড়ি করতে থাকেন। (উনি এদিক দিয়ে যাবেই) প্রায় আধাঘণ্টা পর্যন্ত উপস্থিত সবাই তাকে তোষামোদ করেও অন্য পথে পাঠাতে পারেনি। উল্টো একপর্যায়ে উনি সেচ্ছাসেবকদের কলার ধরে ধাক্কা দিতে দিতে সামনে আগাতে থাকেন। তখনই বিপত্তি বাধে। উল্লেখঃ উনার হাতে কোন ক্যামেরা বা গলায় সাংবাদিকদের কার্ড ছিলো না। মুরুব্বিরা আশঙ্কা করছেন- মূলত উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবেই উনি পরিস্থিতি তৈরি করেছেন।”
তবে, কোথাও নির্ভরযোগ্য সূত্রে হামলাকারীরা জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী শীর্ষক দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, আমার দেশ এর সাংবাদিক ইউনুছ শরীফের ওপর হামলা জামায়েত শিবির এর নেতা কর্মীরা করেছে শীর্ষক দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Daily Amar Desh – ভোলায় সাংবাদিকের ওপর হামলা, ধরাছোঁয়ার বাইরে সন্ত্রাসীরা
- Daily Inqilab – ভোলায় আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিকের উপর হামলা
- Mortuza Nijame – Facebook Post
- Statement of Younush Shorif, Bhola Correspondent, Daily Amar Desh
- Statement of Abu Shahadat Md. Hachanain Parvez, Officer In Charge, Bhola Sadar Police Station
- Rumor Scanner’s analysis