হাসনাত আবদুল্লাহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য দাবিতে সম্পাদিত ছবি প্রচার

সম্প্রতি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য দাবিতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

উক্ত দাবিতে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, হাসনাত আবদুল্লাহ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি বাস্তব নয়; মূলত, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভিন্ন ব্যক্তির মুখমণ্ডলের স্থলে হাসনাত আবদুল্লাহর মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে, বিনোদন প্ল্যাটফর্ম 9GAG-এ ২০১৯ সালের ৯ মার্চ তারিখে প্রকাশিত প্রায় একই ছবির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে, সেই ছবিতে হাসনাত আবদুল্লাহর পরিবর্তে অন্য এক ব্যক্তির মুখমণ্ডল দেখা যায় এবং আয়তাকার একটি বস্তুর ওপর থাকা বাংলাদেশের পতাকার পরিবর্তে দক্ষিণ সুদানের পতাকা দেখা যায়। এছাড়া ছবির অন্যান্য সব বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়। ২০১৯ সালে একই ছবি অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার হতে দেখা যায়।

Screenshot: 9gag.

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক ওয়েবসাইট interaffairs.ru-তে ২০২০ সালের একটি কলামে একই ছবি ব্যবহার করতে দেখা যায়। সেখানে ছবিটিকে দক্ষিণ সুদানের এক যোদ্ধার ছবি হিসেবে বর্ণনা করা হয় এবং ছবিটি টুইটার (বর্তমানে এক্স) থেকে প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়।

২০১৯ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময় একই ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিনোদনমূলক পোস্ট হতে দেখা যায়। এছাড়া ছবির ব্যক্তির হাতে থাকা ‘Why Nations Fail‘ বইয়ের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালে প্রকাশিত এই বইটি অর্থনীতিবিদ ড্যারন অ্যাসেমোগ্লু এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেমস এ. রবিনসন রচনা করেছেন। এ বছর সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুদানে প্রতিষ্ঠিত “সেভেরিজেস রিক্সব্যাংক প্রাইজ ইন ইকোনমিক সায়েন্সেস ইন মেমোরি অব আলফ্রেড নোবেল” পুরস্কার বিজয়ী তিনজন অর্থনীতিবিদের মধ্যে দুইজনই এই বইয়ের রচয়িতা ড্যারন আজেমোগ্লু ও জেমস এ. রবিনসন। তাদের এই পুরস্কার পাওয়াকে কেন্দ্র করেও সম্প্রতি এই ছবিটি ভাইরাল হতে দেখা যায় (,)।

উক্ত ছবিটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ছবির ব্যক্তির মুখমণ্ডলের জায়গায় হাসনাত আবদুল্লাহর মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ছবিটি বিকৃত করার জন্য  ফেস সোয়াপিং (Face Swapping) নামে পরিচিত একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে একজন ব্যক্তির মুখমণ্ডল অন্য ব্যক্তির শরীরের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হয় যে সাধারণ মানুষের পক্ষে আসল এবং বিকৃত ছবির মধ্যে পার্থক্য করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপ এবং সফটওয়্যারের সাহায্যে খুব সহজেই এমন ভুয়া ছবি তৈরি করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, ছবিটির অস্তিত্ব ২০১৯ সাল থেকে ইন্টারনেট পাওয়া গেলেও ছবির মূল প্রেক্ষাপট সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি রিউমর স্ক্যানার টিম। তবে, ওপরে উপস্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে এটি প্রমাণিত যে মূল ছবিতে হাসনাত আবুদল্লাহ ছিলেন না। অন্য এক ব্যক্তির ছবি সম্পাদনা করে সেখানে হাসনাত আবদুল্লাহর মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে। 

সুতরাং, হাসনাত আবদুল্লাহ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পাদিত৷

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img