‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে বরিশালে শিক্ষার্থী মারা যায়নি, ডিবিসির নামে ভুয়া তথ্য

সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ঘটেছে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। এসবের মাঝে গতকাল ৩১ জুলাই বরিশালে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে একজন ছাত্রী নিহত হয়েছে দাবিতে মূল ধারার গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩১ জুলাই বরিশালে একজন ছাত্রী নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয় এবং ডিবিসিও এমন কোনো তথ্য প্রচার করেনি বরং বরিশালে কর্মসূচীতে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির আহতের খবর গণমাধ্যমে এলেও কেউ মারা যায়নি বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

অনুসন্ধানের শুরুতে বরিশালে ছাত্রী নিহত হওয়ার দাবিতে ডিবিসি নিউজ কোন সংবাদ প্রকাশ করেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে ডিবিসি নিউজের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, ইউটিউবে এ বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতের জন্য ডিবিসি নিউজের ডিজিটাল বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার কামরুল ইসলাম রুবেলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “না, আমরা এ ধরণের কোন নিউজ কখনোই পোস্ট করিনি।”

একই বিষয়ে ডিবিসি নিউজের সম্পাদক জায়েদুল আহসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে ডিবিসি এমন কোন নিউজ করেনি বলে তিনিও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন।

বরিশালের গতকালের ঘটনা বিষয়ে জানতে পরবর্তী অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল (৩১ জুলাই) সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, গণহত্যা, গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বুধবার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরই প্রেক্ষিতে বরিশালের টাউন হল চত্বর থেকে বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তীর নেতৃত্বে বড় একটি মিছিল শুরু হয়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। মিছিলটি আদালত চত্বরের দিকে রওনা দিলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তর্কাতর্কির একপর্যায়ে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। উক্ত ঘটনায় ৪ জন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ১১ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে।

তবে উক্ত প্রতিবেদনে কোন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

অনলাইন পোর্টাল বিডিনিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে একইদিন প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল বরিশালে শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জে সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে উক্ত প্রতিবেদনে কোন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

এছাড়া গতকাল (৩১ জুলাই) জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সমকাল, আরটিভি অনলাইন এ প্রকাশিত একই সংবাদে কোন মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে ‘সময় টিভি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল (৩১ মার্চ) বরিশালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে পুলিশি লাঠিচার্জের ঘটনায় কোন ছাত্রীর মৃত্যু হয়নি। তথ্যটি সময় টিভিকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর বরিশাল জেলার সমন্বয়ক ডা. মনিষা চক্রবর্তী নিশ্চিত করেছেন। 

উক্ত বিষয়ে ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন,  পুলিশ যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাতেই তো একটি মহল গুজব ছড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পুরো বরিশালে ছড়িয়ে পড়েছে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর। পুলিশ যদি হামলা না করতো তাহলে তো আর এই গুজব ছড়াত না। 

মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই গতকাল ৩১ জুলাই বরিশালে একজন ছাত্রী নিহত হয়েছে দাবিতে ডিবিসি নিউজের বরাত দিয়ে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গতকাল বরিশালে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে একাধিক শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক আহত হলেও কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

সুতরাং, ডিবিসি নিউজের নাম ব্যবহার করে ৩১ জুলাই বরিশালে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে একজন ছাত্রী নিহত হওয়া শীর্ষক দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img