কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের দেওয়া সারাদেশ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকা অবরোধ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে দিনব্যাপী তাদের সাথে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরই প্রেক্ষিতে কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত হয়েছেন- শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হলেও এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হননি, বরং কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে নিহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিক ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কুমিল্লা সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
কুমিল্লার স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আলোচিত ঘটনায় নিহতের কোনো তথ্য তারা পাননি।
বাংলা ট্রিবিউনের কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় কারো নিহত হওয়ার তথ্য আমরা পাইনি।
ইনডিপেনডেন্ট টিভি’র কুমিল্লা প্রতিনিধি তানভীর দীপু বলেন, নিহতের তথ্যটি মিথ্যা। এখন পর্যন্ত কেউ নিহত হওয়ার তথ্য আমরা পাইনি।
উক্ত বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. শেখ ফজলে রাব্বির সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রায় ৯১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো দুইজন চিকিৎসাধীন আছেন। তবে কেউ নিহত হননি।
কুমিল্লা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ড. আব্দুল করিম বলেন, আমাদের এখানে কেউ নিহত হননি। সদর হাসপাতাল থেকে ৫০-৬০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে, গুরুতর আহত কেউ ছিলেন না।
মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড অবরোধ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কুমিল্লার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে বাধা দিলে শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে, কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত হয়েছেন- শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক আহত হলেও কেউ নিহত হননি। এছাড়া, কুমিল্লার একাধিক স্থানীয় সাংবাদিক, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে উক্ত ঘটনায় নিহত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় গণমাধ্যম সূত্রে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২০২ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
সুতরাং, কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statements from Local Journalists, Cumilla
- Statement from Cumilla Madical College Hospital Director
- Statement from Cumilla Sadar Hospital Madical Officer
- Prothom Alo- চিকিৎসাধীন আরও একজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ২০২
- Rumor Scanner’s Own Analysis