জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসানের শয্যাশায়ী অবস্থায় ক্ষমা চাচ্ছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, তিনি এই ভিডিওতে বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদ্রাসাকে গালিগালাজ করায় আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাইরাল ভিডিওতে হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদ্রাসাকে গালিগালাজ করায় আল্লাহ শাস্তি দিয়েছেন শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি ডা. মুরাদ হাসান বরং, ২০২২ সালে সিলিং ফ্যান পড়ে আহত হওয়ার পর সেসময় গণমাধ্যমকে দেওয়া মুরাদের সাক্ষাৎকারের ভিডিওতে ভিন্ন ব্যক্তির কণ্ঠ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যুক্ত করে এই দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে সময় টিভির লোগো লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তীতে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে “সিলিং ফ্যান থেকেও রক্ষা পেলেন না ডা. মুরাদ!” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ মে সন্ধ্যা সাতটার দিকে জামালপুরে সরিষাবাড়ির দৌলতপুরে জামালপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডাক্তার মুরাদ হাসান নিজ গ্রামের বাড়ির বৈঠক খানায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ ঘরের শিলিং ফ্যান খুলে তার উপর পড়লে তিনি আহত হন।
প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হলরুমের বাইরে উঠানের উপরে টিন শেড করা ওখানে লাইট ফ্যান আছে ওখানে বসেই আমি কথা বলছিলাম, রোগী দেখছিলাম। তো আমার ওই সময়টাতে বেশ গরম লাগছিলো। তো আমি আমার চেয়ারটা সরিয়ে ঠিক ফ্যানের নিচে গিয়ে বসি। তো বসার দুই তিন মিনিট বাদে ফ্যান অদ্ভুতভাবে চিন্তাও করতে পারিনাই তো এসে খুলে আমার মাথার ডান চোখের ভ্রুর ওপরে এমন জোরে বারি খেয়ে ছিটকে পড়ে যাচ্ছিলাম। তো আমার সঙ্গে যারা ছিলো এইযে লোকজন নেতা-কর্মীরা ফ্যানটা ধরছে, নয়তো আরও ক্ষতি হত্র পারতো। তো আল্লাহর রহমতে আল্লাহ আমায় নিজে বাচাইছে। আল্লাহ নিজে আমার চোখটা রক্ষা করেছেন। আমাদের নেতা-কর্মীরা তাৎক্ষনিক ভাবে ফ্যান সরিয়ে আমাকে ধরে তুলে… এতো রক্ত পড়ছিল আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম আরও বড় কোন ক্ষতি। তো এই অবস্থায় যাস্ট এই ফ্যানই অন্য কোন কারণে দূর্ঘটনা। একটা জিআই তারের মধ্যে লাগানো এংগেল দিয়ে লাগানো ছিলো। এটা হয়তাও কেউ খেয়াল করেনাই। আগে কখনো এমন কোন ঘটনা ঘটেনাই। অন্যান্য সব ফ্যান ঠিক আছে। ওইখানে প্রায় ছয়টা ফ্যান আছে। ছয়টা ফ্যানের মধ্যে আমি শুধু যেই ফ্যানের নিচে ছিলাম শুধু ওই ফ্যানটা খুলে পড়েছে বাকিগুলো কিন্তু চলছিলো। ও গুলো খুলে পড়ে নাই। আমি আসলে মানুষের সেবা করার জন্যই আসলে এলাকায় আসি, এলাকায় থাকি। আর কোনো উদ্দেশ্য নাই। আমাকে জনগণ ভোট দেয়, নির্বাচিতও করেছে। আমাদের এই উপজেলার, এই নির্বাচনী এলাকার মানুষজনই বারবার নির্বাচিত করেছে তারা আমাকে ভালোবাসে আমিও তাদের আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।”
তবে উক্ত ভিডিওতে ডা. মুরাদ হাসানকে হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদ্রাসাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, ভিন্ন ব্যক্তির কণ্ঠ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ভিডিওতে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
ডা. মুরাদ হেফাজতে ইসলাম বা কওমী মাদ্রাসা প্রসঙ্গে পূর্বে কোনো মন্তব্য করেছিলেন কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধানে মূল ধারার গণমাধ্যম নিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর “সাঈদীকে আদর-আপ্যায়নের মানে হয় না: প্রতিমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডা. মুরাদ হাসান বলেন, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মতো একজন কুখ্যাত রাজাকার, তার যুদ্ধকালীন যে ইতিহাস সেটা সবাই জানি। যিনি একের পর এক অস্থিতিশীল ঘটনা ঘটনার জন্য দায়ী। তাদের সমর্থকেরা জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির বা আরেকটা ভার্সন আছে হেফাজতে ইসলাম। তবে সবাই না, সবার কথা বলছি না, উগ্রপন্থী যারা তাদের কথা বলছি।
এছাড়া, আমাদের অনুসন্ধানে হেফাজতে ইসলাম বা কওমী মাদ্রাসা নিয়ে ডা. মুরাদকে কোনো গালাগাল দিয়ে মন্তব্য করার তথ্য মেলেনি।
মূলত, ২০২২ সালে জামালপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান নিজ গ্রামের বাড়ির বৈঠক খানায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ ঘরের শিলিং ফ্যান খুলে তার উপর পড়লে তিনি আহত হন। এই বিষয় নিয়ে সেসময় সময় টিভি একটি ভিডিও প্রতিবেদনে ডা. মুরাদ হাসানের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেদিনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন তিনি। তবে সম্প্রতি, উক্ত প্রতিবেদনের ভিডিও ফুটেজ যুক্ত করে ডা. মুরাদ হাসান হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদ্রাসাকে গালিগালাজ করায় আল্লাহ তাকে শাস্তি দিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সময় টিভির প্রতিবেদনে তিনি “আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিচ্ছে। আমি হেফাজতকে, কওমী মাদ্রাসাকে গালিগালাজ করায়, আল্লাহ আমাকে প্রচুরভাবে শাস্তি দিচ্ছে” শীর্ষক মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন ব্যক্তির কণ্ঠ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় উক্ত ভিডিওতে যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদ্রাসাকে গালিগালাজ করায় আল্লাহ ডা. মুরাদ হাসান শাস্তি দিয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Somoy TV – সিলিং ফ্যান থেকেও রক্ষা পেলেন না ডা. মুরাদ!
- NEWS24 – সাঈদীকে আদর-আপ্যায়নের মানে হয় না: প্রতিমন্ত্রী
- Rumor Scanner’s own analysis