সম্প্রতি “দেশের ব্যাংকিং খাত কে দেউলিয়া ঘোষণা করলো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)” শীর্ষক একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেশের ব্যাংকিং খাতকে দেউলিয়া ঘোষণা করে নি বরং ঋণ খেলাপি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে খাদের কিনারায় ব্যাংকিং খাত চলে এসেছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।
অনুসন্ধানে যা জানা যায়
অনুসন্ধানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত বিবৃতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, উক্ত বিবৃতির কোথাও ব্যাংকিং খাতকে দেউলিয়া বলে ঘোষণা করা হয় নি।

‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ এর ওয়েবসাইটে গত ৫ ডিসেম্বর “Central Bank non-functional: Puts banking sector on edge Default loan, political influence, and business groups intervention blight Bangladesh Bank” শীর্ষক শিরোনামের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে ঋণ খেলাপি কারণে ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারায় বলে অভিহিত করা হয়। উক্ত বিবৃতির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

টিআইবির এই প্রতিবেদনের ওপর দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গত ৫ ডিসেম্বরে “খাদের কিনারে ব্যাংক খাতক” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রাকাশ করে।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়,
“ইসলামী ব্যাংকসহ তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঠিকানা ও অস্তিত্ববিহীন কোম্পানির নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বেসরকারি সংস্থাটি মনে করে, এই পরিস্থিতি খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারে জর্জরিত ব্যাংক খাতকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে।”
পরবর্তীতে দেশীয় মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভিতেও একই তারিখে “ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে : টিআইবি” শীর্ষক শিরোনামের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনেও টিআইবি’র বিবৃতির ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারায় বলে জানানো হয়।
টিআইবির বিবৃতি কিংবা গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন, কোথাও ব্যাংকিং খাতকে দেউলিয়া ঘোষণার উল্লেখ নেই। সেখানে কেবল টিআইবির বিবৃতি অনুযায়ী ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে শীর্ষক তথ্য পাওয়া যায়। ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে এই বিষয়টিকেই পরবর্তীতে অতিরঞ্জিত ভাবে “ব্যাংকিং খাত দেউলিয়া” হওয়ার দাবিতে প্রচারিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।
এছাড়াও, টিআইবি’র ওয়েবসাইটের অন্যান্য বিবৃতিগুলোও পর্যবেক্ষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার। কিন্তু কোথাও টিআইবি’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে “দেউলিয়া” বলে ঘোষণা করা হয় নি।
অপরদিকে ফেসবুকে মনিটরিং টুল ব্যবহার করে দেখা যায় ‘Salina Sultana Nishita‘ নামের একটি আইডি থেকে ৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টা ৩ মিনিটে উক্ত দাবিতে সম্ভাব্য প্রথম পোস্টটি করা হয়েছিলো।

মূলত, গত ৫ ডিসেম্বর নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বিভিন্ন অনিয়ম ও ঋণ খেলাপির বিষয়গুলো তুলে ধরে ব্যাংকিং খাতকে খাদের কিনারায় বলে উল্লেখ করে টিআইবি। পরবর্তীতে উক্ত বিষয়টি অতিরঞ্জিত ভাবে টিআইবি’র নাম উদ্ধৃত করে ব্যাংকিং খাতকে দেউলিয়া দাবিতে প্রচারিত হতে থাকে।
উল্লেখ্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দূর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা। ১৯৯৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে এবং ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পায় এ সংস্থাটি।
সুতরাং, টিআইবি’র নাম উদ্ধৃত করে দেশের ব্যাংকিং খাতকে দেউলিয়া ঘোষণা করার দাবি করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।