ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর রওয়ানা হওয়ার ভিডিও দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার দৃশ্য প্রচার

চলমান ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের মধ্যে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে সামরিক পোশাক পরিহিত কিছু সৈন্যকে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, এরা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্য এবং এরা ফিলিস্তিন রওয়ানা দিচ্ছে। 

রাশিয়ার

উক্ত দাবিতে ফেসবুকের কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ),

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর রওয়ানা হওয়ার নয় বরং চেচনিয়ার সৈন্যদের পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার দৃশ্যকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে ভিডিওটির কিছু কী ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইউটিউবের একটি চ্যানেলে গত ০৮ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল লক্ষ্য করা গেছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে এই সৈন্যদের ‘চেচেন মুসলিম সৈন্য’ বলে দাবি করা হয়। 

Screenshot: YouTube

চেচেন সৈন্যদের পোশাকের (,) সাথে ইউটিউবের ভিডিওটিতে প্রচারিত সৈন্যদের আউটফিটের বেশ মিল প্রতীয়মান হয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিমের কাছে। 

Image comparison: Rumor Scanner

আরও অনুসন্ধান করে ইনস্টাগ্রামের একটি অ্যাকাউন্টে ২০২২ সালের ০৮ মার্চ প্রকাশিত একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই পোস্টের ক্যাপশনেও এই সৈন্যদের চেচেন মুসলিম সৈন্য বলে অভিহিত করা নয়৷

Screenshot: Instagram 

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ককেশাস পর্বতমালার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র চেচনিয়া। ১৯৯৬ সালে চেচেন নেতা আসলান মাসখাদভ রাশিয়ার সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় চেচেনরা পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা না পেলেও অধিকতর স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। এর অধিকাংশ মানুষই মুসলিম। বর্তমানে চেচনিয়ার ক্ষমতায় আছেন রমজান কাদিরভ। 

চলমান সংঘাত শুরুর পর গত ০৮ অক্টোবর টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় কাদিরভ জানান, তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে আছেন এবং এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার অবস্থান। কাদিরভ এই যুদ্ধ থামাতে শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দেন, যাতে ‘শৃংখলা পুনরুদ্ধার এবং যে কোনো সমস্যা সৃষ্টিকারীদের মোকাবিলা করা যায়। 

এই প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত এই প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো অগ্রগতির তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়নি।

মূলত, গত ০৭ অক্টোবর থেকে চলমান ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাতের মধ্যে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনী রওয়ানা হওয়ার দৃশ্য এটি। কিন্তু রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান জানা যায়, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় এবং এটির সাথে সাম্প্রতিক সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্তত ২০২২ সালের মার্চ থেকে ভিডিওটি ইন্টারনেটে রয়েছে এবং ভিডিওতে দেখানো সৈন্যদের আউটফিটের সাথে চেচেন সৈন্যদের আউটফিটের হুবহু মিল রয়েছে। সে সময় চেচেনরা ইউক্রেনে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল এবং তখন প্রকাশিত এই ভিডিওতেও একই তথ্য দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। তাছাড়া, চেচনিয়ার পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের শান্তি রক্ষায় বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।  

প্রসঙ্গত, চলমান ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের সংঘাত ইস্যুতে একাধিক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার৷

সুতরাং, ফিলিস্তিনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর রওয়ানা হওয়ার ভিডিও দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার দৃশ্য ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর। 

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img