দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন যাবত রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যা নিয়ে সারাদেশেই ব্যাপক আলোচনাও চলছে। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি সাপের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, “শেষ পর্যন্ত সাতকানিয়ায় রাসেল ভাইপার এর দেখা মিলছে।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বিষধর রাসেল’স ভাইপার সাপ প্রাপ্তির দাবিতে প্রচারিত ছবিটি রাসেল’স ভাইপার সাপের নয়, বরং এটি নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপের ছবি, যার কামড়ে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইনে বিদ্যমান রাসেল’স ভাইপারের ছবি কিংবা গঠনগত বৈশিষ্ট্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। রাসেল’স ভাইপারের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii এবং রাসেল’স ভাইপারের মাথার আকৃতি ত্রিকোণাকার ও রাসেল’স ভাইপারের গায়ে স্পষ্ট গোলাকার অনেকটা চেইনের মতো দাগ থাকে৷ তাছাড়া, বাংলাদেশ এলাকায় প্রাপ্ত রাসেল’স ভাইপারে সাধারণত উজ্জ্বল আকৃতির বাদামি বর্ণের মধ্যে স্পষ্ট গোলাকার দাগ থাকে। উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির সাথে মিলে না।

অপরদিকে প্রচারিত ছবিটির সাথে জলঢোঁড়া সাপ বা Checkered keelback সাপের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। টেকসই ভবিষ্যৎ ও বৃক্ষ রোপণ বিষয়ক ভারতীয় কোম্পানি Greenverge এর ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, জলঢোঁড়ার বৈজ্ঞানিক নাম Xenochrophis piscator. এটি একটি নির্বিষ সাপ যা সরু এবং দীর্ঘায়িত দেহের জন্য দ্রুত এবং চটপটে। এদের ত্বকে স্বতন্ত্র ছককাটা প্যাটার্ন রয়েছে, যেখানে কালো এবং হলুদ দাগের বিন্যাস থাকে। এই প্রজাতির সাপের গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৩-৪ ফুট এবং ওজন ২০০-৫০০ গ্রাম। তারা তুলনামূলকভাবে হালকা, যা তাদের দ্রুত চলাচল করতে সাহায্য করে এবং চ্যাপ্টা ও চওড়া লেজের কারণে তারা ভালভাবে সাঁতার কাটতে পারে। এদের খাদ্যতালিকায় মূলত মাছ, ব্যাঙ এবং ছোট সরীসৃপ থাকে, যা তাদেরকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মূল্যবান শিকারী করে তোলে।
এছাড়া, বাংলাদেশি অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা নিউজ২৪ কে ঢোঁড়া সাপের আকৃতি ও শারীরিক গঠন সম্পর্কে বন্যপ্রাণি সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী কামরুজ্জামান বাবু বলেন, “সাপটির দৈর্ঘ্য ১৫০ থেকে ১৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা। দেহের রঙ উপরিভাগ হলুদাভ সাদাটের সঙ্গে জুড়ে বাদামি বা কালো রঙের ছককাটা ছোপ ছোপ দাগ থাকে। দেহের নিচের অংশ চক চকে হলদে সাদাটে। মাথার রঙ বাদামি। চোখের নিচে থেকে ওপরের ঠোঁট পর্যন্ত কালো একটা রেখা থাকে। ঢোঁড়া সাপের চোখ বড় ও বৃত্তাকার কোটর হয়ে থাকে।”

এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে সাপ ও সাপের উদ্ধার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম Snake Rescue Team Bangladesh এর জেনারেল সেক্রেটারি প্রিতম সুর রায়ের সাথে৷ তিনি আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয় বরং নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপ বলে নিশ্চিত করেন।
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি সাপের ছবি পোস্ট করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় তীব্র বিষধর রাসেল’স ভাইপার সাপ সন্ধান পাওয়ার দাবি করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটি তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপারের নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপের ছবি।
সুতরাং, নির্বিষ জলঢোঁড়া সাপের ছবিকে সাতকানিয়ায় তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপারের সন্ধান মেলার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Forestry – Russell’s Viper
- Greenverz – Checkered Keelback
- Bangla News24 – আপন আশ্রয় হারাচ্ছে ঢোঁড়া সাপ
- Statement of Pritom Sur Roy
- Rumor Scanner’s own analysis