যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক না নেওয়ার ঘোষণা দেয়নি  

সম্প্রতি,‘বাংলাদেশ থেকে আর তৈরপোশাক নেবে না, যুক্তরাষ্ট্র!’ শীর্ষক দাবিতে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)। 

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সঠিক নয় বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই উক্ত তথ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।

সূত্রহীন তথ্য

অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্র আছে কি না তা যাচাই করে দেখে। তবে অনুসন্ধানে উক্ত পোস্টগুলোতে কোনো তথ্যসূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এছাড়া এ প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যমেও কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের বানিজ্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা)র ওয়েবসাইট trade.gov  এ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটির সত্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার টিম।

Screenshot: trade.gov

তবে অনুসন্ধানে ওয়েবসাইটটিতে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন কোনো তথ্যের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক না নেওয়ার দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি কোনো সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পোষাক রফতানির অবস্থান সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

রিউমর স্ক্যানার টীম অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পোষাক রফতানির অবস্থান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে। এ নিয়ে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে গত ৯ জুন ‘তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot: Prothom Alo

প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যানের বরাতে বলা হয়, চলতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। ফলে এই বাজারে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। এই পাঁচ দেশের মধ্যে চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বেশি কমেছে। 

Screenshot: Prothom Alo

এর মধ্যে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে  ২৭০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছিল ৩২৮ কোটি ডলারের পোশাক।

পাশাপাশি আরেকটি জাতীয় দৈনিক সমকালে গত ১৮ জুন ‘পোশাক রপ্তানি বিশ্বে বেড়েছে, কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলেই মনে হচ্ছে। 

Screenshot: Samakal 

কারণ, সারাবিশ্ব থেকেই আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত প্রায় ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা হিসেবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ কারণে চাহিদা কমে এসেছে সেখানে। বিশেষ করে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা অনেক কম। মূলত এ কারণেই পোশাক রপ্তানি কমছে। 

এছাড়া প্রতিবেদনটিতে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, রপ্তানি কমে আসার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। যত কিছুই হোক পোশাক আমদানিতে কোনো ধরনের চাপ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক বৈরী সম্পর্কের কারণে সে দেশ থেকে পোশাক বেশি নিচ্ছে না।

Screenshot: Samakal

মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নেওয়া উদ্যোগের ফলে দেশটিতে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা কমে এসেছে। যার ধারাবাহিকতায় দেশটিতে সারাবিশ্ব থেকেই আমদানি কমেছে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, যুক্তরাষ্ট্র  বাংলাদেশ থেকে আর তৈরি পোশাক নেবে না। তবে অনুসন্ধানে উক্ত দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আর তৈরি পোশাক নেবে না দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img