সম্প্রতি, গত ১৪ জুন (বুধবার) সিলেটে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ার দাবিতে ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
টিকটকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদনাকৃত। প্রকৃতপক্ষে ২০২২ সালে সিলেটে হয়ে যাওয়া বন্যার খণ্ড খণ্ড পুরানো ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে সিলেটের বর্তমান বন্যার দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধান যেভাবে
অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টীম সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত উক্ত ভিডিওটিতে একটি গণমাধ্যমের লোগো ঝাপসা করে দেওয়া লোগো ও সময় টিভির একটি মাইক্রোফোন দেখতে পায়।
এই লোগো ও মাইক্রোফোনের সূত্রে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালে সিলেটে বন্যা নিয়ে প্রচারিত তিনটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওগুলোর সঙ্গে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে থাকা একাধিক দৃশ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এর মধ্যে ২০২২ সালের ২২ মে সময় টিভিতে ‘ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওটির ২৪ সেকেন্ড থেকে ৩৪ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল দেখা যায়।
একই বছরের ১৭ জুন সময় টিভিতে ‘সিলেটের হাওড়াঞ্চলে আবারও ভয়াবহ বন্যা’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদনের ৩৬ সেকেন্ড থেকে ৪৬ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
এছাড়া ২০ জুন ‘সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত!’ শীর্ষক শিরোনামে সময় টিভিতে প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও প্রতিবেদনের ৫ সেকেন্ড থেকে ৩৪ সেকেন্ড সময় পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গেও আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বৃহৎ অংশই সময় টিভির ২০২২ সালের সিলেটের বন্যার সময়ের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে নেওয়া।
রিউমর স্ক্যানার টিম পরবর্তীতে আলোচিত ভিডিওটিতে থাকা অন্যান্য অংশগুলো নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। এতে আলোচিত ভিডিওটির শুরুতেই থাকা অংশটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এখন টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ১৭ জুন ‘ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে সিলেটের বন্যা, চারদিকে হাহাকার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের প্রথম ১৫ সেকেন্ড অংশের সাথে আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
একই ভিডিও প্রতিবেদনের ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড সময়ে প্রদর্শিত দৃশ্যের সঙ্গেও আলোচিত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
এছাড়া রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে Beautiful World নামের একটি পেইজে ২০২২ সালের ১৬ জুন ‘সিলেটে আবারও বন্যা। শহরের অনেক এলাকাও তলিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে।’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর একটি অংশের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ২০২২ সালের মে মাসে আসাম ও অরুণাচল প্রদেশে অধিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদী, কুশিয়ারা নদী ও অনান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। সেই সময়ে এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তবে সম্প্রতি সেসব ভিডিও থেকেই বিভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, ফলে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উজানে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে এবং এর ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
সুতরাং, ২০২২ সালের সিলেটের বন্যার দৃশ্যকে সাম্প্রতিক সময়ের সিলেটের বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Somoy TV(1): ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি
- Somoy TV(2): সিলেটের হাওড়াঞ্চলে আবারও ভয়াবহ বন্যা
- Somoy TV(3): সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত!
- Ekhon TV: ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে সিলেটের বন্যা, চারদিকে হাহাকার
- Beautiful World: সিলেটে আবারও বন্যা। শহরের অনেক এলাকাও তলিয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে
- Voice of America: ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস: সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা
- Daily Ittefaq: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ, শহরে হু-হু করে ঢুকছে পানি