সম্প্রতি, এইমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার সজিব ওয়াজেদ জয় খবর শুনেই স্টক করলো শেখ হাসিনা– শীর্ষক শিরোনামে এবং থাম্বনেইলে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।

ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হননি বরং অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিওর সাথে চটকদার শিরোনাম ও থাম্বনেইল ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
আলোচিত ভিডিওটি পর্য়বেক্ষণ করে দেখা যায়, ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন নবনির্বাচিত তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের সাক্ষাৎকার নেওয়ার ভিডিও এটি। এছাড়া, ভিডিওটিতে ডয়েচে ভেলের লোগোও দেখা যায়।
উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ জানুয়ারি “কী করবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশোর লাইভ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটির একই অংশই আলোচিত ভিডিওটিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

১ ঘন্টা ৫৩ সেকেন্ডের টকশোটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ৩১ মিনিটের মাথায় সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতকে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।
প্রশ্নে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, প্রাইম মিনিস্টারের পুত্র জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এবার ভোটের সময় কেন এলেন না? প্রাইম মিনিস্টার যে বলেছিলেন, ওরা যদি আমার ছেলের সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে দেশ থেকে ভাগিয়ে দিতে চায় বা দেবে- একথা কি তিনি কোনো আশংঙ্কা থেকে বলেছিলেন? জয় সাবেক কি কোনো সমস্যায় আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে? অনেকে বলছেন যে তিনি নানা ধরনের সমস্যায়, প্রতিকূলতা তিনি ফেস করছেন, তার সম্পত্তি সেখানে বাজেয়াপ্ত হতে পারে, তার টাকাপয়সা… নানা জায়গা থেকে তার অনেক টাকাপয়সা রয়েছে।…
উত্তরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, আমার কথা হলো যে ন্যূনূনতম কোনো এভিডেন্স আর তথ্য ছাড়া এধরনের কথা বলা বা প্রশ্ন তোলাও ঠিক নয়। এগুলো নিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলা হয়েছে। তারপর তিনি বাংলাদেশে এসেছিল, এসে ঘুরে গেছে। তখন আপনারা দেখেছেন ইয়ুথ ইয়াং বাংলার বিভিন্ন প্রোগ্রামে সে পার্টিসিপেট করেছে। আবার সে গেছে। কিছুদিন পর হয়তো আবার আসবে। এখন ইলেকশনের সময় কেন আসলো না বা…তার সাথে এগুলোর কী সম্পর্ক আমি জানি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সম্পত্তি বাজেয়াপ্তর বিষয়। সেটা আপনি যদি খেয়াল করেন কনটেক্সটটা দেখলে বুঝতে পারবেন কেন বলেছিলেন। যখন এইযে ভিসা স্যাংশন এগুলো নিয়ে কথা বলছিল অ্যামেরিকানরা সেটা নিয়ে অনেক ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে। তখন তিনি বলেছেন যে, এগুলো নিয়ে আমরা বদার্ড না। আমরা বাংলাদেশকে ভালো বুঝি, আমরা ভালো চিনি, এটা আমাদের দেশ। এদেশকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। ওই পাশ্চাত্যের কী ভিসা স্যাংশন দিচ্ছে কি দিচ্ছে না এগুলো নিয়ে আমরা কেয়ার করি না। এটি বলতে যেয়ে প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন যে, আমার ছেলেও তো এখানে পড়াশোনা করেছে, চাকরি করে, থাকে, এখানে তার বাড়ি আছে, তার সবকিছু এখানে আছে।… এটি নিয়ে আমরা যে বদার্ড না এটি বুঝানোর জন্য এক্সট্রিমে যেয়ে উনি এটা বলেছেন।… কনটেক্সটটা দেখলে বুঝা যায়।
অর্থাৎ, মোহাম্মদ এ আরাফাত যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয় গ্রেফতার হওয়া নিয়ে কোনো কথা বলেননি। এছাড়া, খালেদ মুহিউদ্দীনও জয় গ্রেফতার হয়েছেন এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।
এছাড়া, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হয়েছেন- শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আলোচিত দাবিটি মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে, ভিন্ন একটি ভিডিওর সাথে চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং, সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- DW খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়- কী করবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী
- Rumor Scanner’s Own Analysis