শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে রুমিন ফারহানার নামে ভুয়া মন্তব্য প্রচার

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগ করেন। গত ০৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। এর পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের টকশো ও সভা-সেমিনারে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানার সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। এসব জায়গায় নানা মন্তব্য করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আছেন বিএনপির এই নেত্রী। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘আমার মাকে আমি দেশে ফিরিয়ে আনবো’ শীর্ষক থাম্বনেইলে এবং ‘প্রয়োজনে আমি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে- যোগ দিব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ছাড়বো’ শীর্ষক ক্যাপশনে রুমিন ফারহানার মন্তব্য দাবিতে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)

ইউটিউবে এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে এখন পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৫০ হাজারের অধিক বার।

উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন- এখানে (আর্কাইভ)

টিকটকে এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৯ লক্ষাধিক বার। রিঅ্যাক্ট (লাভ) পড়েছে প্রায় ৬৯ হাজার এবং মন্তব্য করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২ হাজারের অধিক বার। এছাড়াও, ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে প্রায় ৭ হাজারের অধিক বার।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা ‘আমার মাকে আমি দেশে ফিরিয়ে আনবো’ এবং ‘প্রয়োজনে আমি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে- যোগ দিব, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ছাড়বো’ শীর্ষক কোনো মন্তব্য করেননি বরং, গত ফেব্রুয়ারী মাসের জিটিভিতে প্রচারিত ‘রাজনীতির হালচাল’ বিষয়ক টকশো থেকে ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করে এতে চটকদার শিরোনাম ও ক্যাপশন ব্যবহার করে ভুয়া এই দাবি প্রচার করা হয়েছে।

অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে এতে শুরুতেই রুমিন ফারহানার একটি বক্তব্য ক্লিপ দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে রুমিন ফারহানাকে বলতে শোনা যায়, “আওয়ামী লীগের চেলাদের তো রক্তে আগুন লেগে যাবে। বাংলাদেশের ফেব্রুয়ারী মাসের ২১-এ ফেব্রুয়ারীর প্রধান নায়ক আমার বাবা অলি আহাদ। এই ইতিহাস স্বীকার করার সাহস আওয়ামী লীগের ছিল কোনোদিন? তারা ইতিহাস লেখে এক ব্যক্তিকে দিয়ে”। উক্ত ফুটেজটি প্রচারের পরই ভিডিওতে ভিডিওর উপস্থাপককে দাবি করতে শোনা যায়, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেছেন, “প্রয়োজনে আমি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে- যোগ দিব, কিন্তু আমার মা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবো।” তবে উপস্থাপককে তার এই দাবির প্রেক্ষিতে কোনো তথ্যসূত্র বা প্রমাণ হাজির করতে দেখা যায়নি।

রুমিন ফারহানার আলোচিত ভিডিও ক্লিপটির কিছু কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ‘GTV News’ ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী ‘ডিবেট টুনাইট | রাজনীতির হালচাল | Politics | Debate Tonight’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি টকশো অনুষ্ঠানের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত ভিডিওর একটি অংশে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত রুমিন ফারহানার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপটি পাওয়া যায়।

Comparison: Rumor Scanner

টকশোটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, টকশোটির এক পর্যায়ে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারের প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানাকে আলোচিত ভিডিওটিতে সংযুক্ত ফুটেজের কথাগুলো বলতে দেখা যায়। তবে উক্ত টকশোতে তাকে “প্রয়োজনে আমি বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগে- যোগ দিব, কিন্তু আমার মা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবো।” শীর্ষক মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।

অর্থাৎ, রুমিন ফারহানার এই ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

উল্লেখ, গত ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে আয়োজিত ‘সংবিধান : ক্ষমতার না জনতার’ শীর্ষক আলোচনায় বর্তমান সংবিধানের অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে কি কোনো সংবিধান আছে নাকি নেই? নেই। যদি সংবিধান না থাকে তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার এই সংবিধানের অধীনে শপথ নিল কী করে? এটা একটা ওপেন ডিসকাশনের জায়গা। এক হচ্ছে, যদি সংবিধান না থাকে তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় কী করে। দুই হচ্ছে, যদি এই সংবিধান থেকে থাকে তাহলে একটা ভয়ংকর খবর আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে। শেখ হাসিনা কিন্তু এখনো প্রধানমন্ত্রী। সংবিধানের ৫৭(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে একজন নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বভার নেওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী তার পদে বহাল থাকবেন।’

অর্থাৎ, রুমিন ফারহানার এই মন্তব্যের সাথেও আলোচিত দাবির কোনো সম্পর্ক নেই।

সুতরাং, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়ে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন বলে মন্তব্য করেছেন শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img