সম্প্রতি, “শিশু ধর্ষণের অপরাধে সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিধানে সই করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে স্বাক্ষরের ছবি সম্বলিত একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাল কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই করার দাবিটি সত্য নয় বরং ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবরে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ০৩ জানুয়ারিতে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে “চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, সাম্প্রতিক সময়ে শিশু ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধানে সই করছেন প্রধানমন্ত্রী শীর্ষক দাবিতে যে ছবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে মূলত সেটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ পরবর্তী সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সংসদ সদস্য বইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরকালের।
পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবরে “ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির সই” শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
মূলত, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবরে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। সে সময় জাতীয় সংসদের অধিবেশন না থাকায় আন্দোলন চলাকালীন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী খসড়াকে তাৎক্ষণিক আইনে রুপ দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবরে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ।
আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর সাথে কুশল বিনিময়ের এই ছবিতে থাকা ব্যক্তিটি জয়নাল হাজারী নন
এরপর নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ অধিবেশন শুরু হলে ০৮ নভেম্বরে রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০০০’ সংসদে উত্থাপন করেন এবং ১৭ নভেম্বর বিলটি সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়ে আইনে পরিণত হয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চম ভাগের ৮০(১২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা নেই। সংসদ সদস্যের ভোট এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতিদানসহ দীর্ঘ এক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেকোনো আইন প্রণয়ন হয়ে থাকে। তবে জরুরী বা সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কিছু শর্তসাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি সরাসরি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
২০১৯ সাল হতে বিভিন্ন সময় কোনো প্রকার তথ্যসূত্র ব্যতীত শিশু ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানে প্রধানমন্ত্রীর সই শীর্ষক দাবিটি ফেসবুকে প্রচার হয়ে আসলেও দাবিটির পক্ষে কোনো সত্যতা মূলধারার গণমাধ্যম গুলোতে খুঁজে পাওয়া যায় নি।
উল্লেখ্য, শিশু ধর্ষণে শাস্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আলাদা কোনো আইন হয়নি। নতুন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নারী ও শিশু উভয় ভিক্টিমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পূর্বের আইনে নারী ও শিশু ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
সুতরাং, শিশু ধর্ষণের অপরাধে সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
[su_box title=”True or False” box_color=”#f30404″ radius=”0″]
- Claim Review: শিশু ধর্ষণের অপরাধে সরাসরি মৃত্যুদন্ডের বিধানে সই করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা
- Claimed By: Facebook Posts
- Fact Check: Misleading
[/su_box]
তথ্যসূত্র
- Prothom Alo: https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%87
- Prothom Alo: https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6-%E0%A6%93-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A8
- BBC News: https://www.bbc.com/bengali/news-54504707
- Bdnews24: https://m.bdnews24.com/amp/bn/detail/bangladesh/1824617
- Bangla Tribune: https://www.banglatribune.com/national/653131/%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B2-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B8
- Ministry of Law: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-835/section-32523.html
- Prothom Alo: https://www.prothomalo.com/bangladesh/%E0%A6%9A%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%8B-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%B9%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96-%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE
- Ministry of Law: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-957/section-30088.html
- Ministry of Law: http://bdlaws.minlaw.gov.bd/act-957/section-30072.html