গত বছরের আক্টোবর থেকে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলের চলমান এই আগ্রাসনে ইতোমধ্যে শিশুসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহিত হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জামার ছবি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ‘ফিলিস্তিনের এক ৮ বছরের মৃত মেয়ের কবরে তার বাবা ঈদের জামা রেখে যাওয়ার ছবি’

ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন- এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এটি ফিলিস্তিনের এক ৮ বছরের মৃত মেয়ের কবরে তার বাবার ঈদের জামা রেখে যাওয়ার ছবি নয় বরং ২০২৩ সালে তুরস্কে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে নিহত এক শিশুর কবরের ওপর রাখা একটি জামার ছবি।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে তুর্কি সাংবাদিক নেভজাত চিচেকে এর ‘nevzatcicekofficial’ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে উক্ত ছবি সহ আরও কয়েকটি ছবি যুক্ত করে ২০২৩ সালের ২২ এপ্রিল করা একটি পোস্ট পাওয়া যায়।

এছাড়া ‘Çiğdem Ela’ নামের তুরস্কের এক এক্স ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল প্রকাশিত একই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “আমার দেশে ঈদ এসেছে।”
পরবর্তীতে দুবাই ভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম গল্ফ টুডের ওয়েবসাইটে একই ছবিসহ আরো দুইটি ভিন্ন ছবি যুক্ত করে ২০২৩ সালের ২২ এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই ছবিগুলো তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। দাবি অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৮ বছর বয়সী মেয়েকে হারানো এক তুর্কি বাবা ঈদের জন্য নতুন জামা কিনে তা মেয়ের কবরের উপর রেখে যান।
২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল ভিন্ন দুই এক্স অ্যাকাউন্টে (১,২) একই পোশাকের ছবি পোস্ট করে তুর্কি ভাষার ক্যাপশনে লেখা হয়, “Zahide (8) years old bought and left a holiday dress for her brother this Eid.” (স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনূদিত)।
তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছবির পেছনের শহরের দৃশ্যটি ভূমিকম্পের পর আদিয়ামান শহরে নির্মিত নতুন কবরস্থানের দৃশ্যের সাথে মিলে যায়।
এই তথ্য ওই কবরস্থানের গুগল ম্যাপে আপলোডকৃত একটি ভিডিওর সাথে তুলনা করেও নিশ্চিত হওয়া যায়।

এছাড়া, আনাদোলু এজেন্সির আদিয়ামান শহরের প্রতিনিধিও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তুরস্কে ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী আঘাত হানা ভূমিকম্প সম্পর্কে যা জানা গেলো
British Red Cross এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়- ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, তুরস্ক এবং সিরিয়ায় একাধিক ভূমিকম্পে ৫৫,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়। এটি ২০ বছরে এই অঞ্চলে দেখা সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। UNDRR এর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়,২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্কে ৫০,০০০ এর বেশি এবং সিরিয়ায় ৫,০০০ এর বেশি মানুষ মারা যান এবং ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ভূমিকম্পে তুরস্কে ৩৮,০০০ এর বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে যায় এবং দুই লাখেরও বেশি ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মূলত, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনের এক ৮ বছরের মৃত মেয়ের কবরে তার বাবা ঈদের জামা রেখে যাওয়ার ছবি দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি জামার ছবি প্রচার করা হয়েছে। তবে, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিটি আদতে তুরস্কের আদিয়ামান শহরে নির্মিত নতুন কবরস্থানে তোলা হয়েছে, এর সাথে ফিলিস্তিনের কোনো সম্পর্ক নেই।
সুতরাং, ২০২৩ সালের ভূমিকম্পে তুরস্কে এক শিশুর কবরের ওপর রাখা জামার ছবিকে ফিলিস্তিনের ৮ বছরের মৃত মেয়ের কবরে তার বাবা ঈদের জামা রেখে যাওয়ার ছবির দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Instagram Post: nevzatcicekofficial
- X Post: Çiğdem Ela
- Gulf Today: Turkish father buys Eid clothes, leaves them on the grave of his 8-year-old daughter killed in earthquake
- X Post: hesaniko kırılmış bir bardak
- X Post: ELA
- Anadolu Agency: The claim that the photo was recorded in Gaza
- Google Maps
- British Red Cross: Türkiye (Turkey) and Syria earthquake 2023: a year on
- UNDRR: One-year anniversary of 6 February earthquakes in Türkiye and Syria
- Rumor Scanner’s Own Analysis