ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ০৫ আগস্ট ক্ষমতা হারায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীতে গত ০৮ আগস্ট তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এর মধ্যে জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় যাচাই-বাছাই ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে ঢালাওভাবে আসামি করার অভিযোগও উঠেছে। কোনো কোনো মামলায় এসেছে মৃত ব্যক্তির নামও। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত শীর্ষ পর্যায় থেকে একেবারে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতারের অভিযোগও তোলা হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাইটিভির লোগো সম্বলিত একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। “গণহত্যা শেষ, এখন শুরু গণ গ্রেফতার” টাইটেলে প্রচারিত ভিডিওটিতে একজন নারীকে গণ গ্রেফতার ও মোবাইল চেক করার প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়৷ ভিডিওটি সংযুক্ত করে “…সবাই বুঝতেছে আগেই ভালো ছিলাম…” শীর্ষক ক্যাপশন লিখে দাবি করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ভিডিওটির নারী গণ গ্রেফতার ও মোবাইল চেক করার অভিযোগটি এনে প্রতিবাদ করছেন।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত ভিডিওগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫৪ হাজারেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৩ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওগুলোতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, গণগ্রেফতার ও মোবাইল চেক করার প্রতিবাদের ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের নয়, বরং আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণ গ্রেফতার ও মোবাইল চেকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদের ভিডিও।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাইটিভির ইউটিউব চ্যানেলে গত ০৩ আগস্ট তারিখে “গণহত্যা শেষ, এখন শুরু হয়েছে গণগ্রেপ্তার” শিরোনামে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশন পর্যবেক্ষণ করলে কোটা আন্দোলনের হ্যাশট্যাগ দেখতে পাওয়া যায়৷ উল্লেখ্য যে, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সংঘটিত হয়েছিল।
তাছাড়া, ভিডিওটি ইউটিউবে পোস্টকালে (০৩ আগস্ট) আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসীন ছিল৷ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তখনও গঠিত হয়নি যা অধিকতর নিশ্চিত করে যে ভিডিওটিতে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সমালোচনা বা প্রতিবাদ করা হয়েছে।
তাছাড়া, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোটা আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গণহারে গ্রেফতার ও মোবাইল চেক করার অভিযোগ একাধিকবার সামনে এসেছে। যার সাথে প্রচারিত ভিডিওটির প্রেক্ষাপটের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
সুতরাং, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণগ্রেফতার ও মোবাইল চেক করার অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদের ঘটনার একটি ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রতিবাদের ভিডিও মর্মে প্রচার করা হচ্ছে, যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- My TV – গণহত্যা শেষ, এখন শুরু হয়েছে গণগ্রেপ্তার
- BBC Bangla – সারাদেশে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান, ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জের ধরেও আটকের অভিযোগ
- The Daily Star – কোটা আন্দোলনকারীদের খুঁজতে শাহবাগে মোবাইল চেক করেছে ছাত্রলীগ
- Rumor Scanner’s own analysis