ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক ফেরি ডুবির ঘটনায় গণমাধ্যমে পুরোনো ছবি

ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি (এপ্রিল) ফেরি ডুবির ঘটনায় বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছয়টি ভিন্ন ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

ছবিগুলো ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর, মানবজমিন, রাইজিং বিডি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দেশ রূপান্তর, নয়া শতাব্দী, ডেল্টা টাইমস, ঢাকা বিজনেস, বিজনেস বাংলাদেশ, সাম্প্রতিক দেশকাল, নয়া দিগন্ত, আলোকিত বাংলাদেশ, বার্তা২৪, সময় জার্নাল, একুশে টিভি, বাংলাদেশ জার্নাল, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, দৈনিক বাংলা

একই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক ফেরি ডুবির ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো উক্ত ঘটনার নয় বরং পূর্বের ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

ছবি যাচাই ০১

Screenshot from bd-pratidin

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুগান্তর, মানবজমিন, রাইজিং বিডি, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দেশ রূপান্তর, নয়া শতাব্দী, ডেল্টা টাইমস, ঢাকা বিজনেস, বিজনেস বাংলাদেশ

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।

ছবিটির মূল সূত্রের বিষয়ে অনুসন্ধানে  যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ‘Reuters’ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। 

Screenshot from Reuters

ছবির বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ২০২০ সালের ২৪ জুন ইন্দোনেশিয়ার উত্তর আচেহ-এর সিউনডন সৈকতের উপকূলের কাছাকাছি সেখানকার জেলেদের কর্তৃক উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্ধারের দৃশ্য।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক ফেরি ডুবির ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ০২

Screenshot from ‘Nayadiganta’

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সাম্প্রতিক দেশকাল, নয়া দিগন্ত, আলোকিত বাংলাদেশ, বার্তা২৪, সময় জার্নাল

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছবি শেয়ারিং এবং স্টোরেজ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান “Getty Images” এর ওয়েবসাইটে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Getty Images

গেটি ইমেজেসের বরাতে জানা যায়, ২০১৫ সালের ০২ জুলাই তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উদ্ধারকারীরা ফিলিপাইনের ওরমক সিটির কাছে ডুবে যাওয়া ফেরির জীবিত যাত্রীদের সন্ধান করছে।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি প্রায় আট বছরের পুরোনো।

ছবি যাচাই ০৩

Screenshot from Ekushey TV

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একুশে টিভি

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।

ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কানাডা ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘Toronto Star’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ০৪ জুলাই প্রকাশিত এক  প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Toronto Star

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এটি ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার সেলেয়ার দ্বীপের কাছে ফেরি ডুবির ঘটনায় আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করার দৃশ্য।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক ফেরি ডুবির ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ৪

Screenshot from ‘Bd-journal’

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জার্নাল

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।

রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘AP’ এর ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের ৩০ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘AP’

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০২১ সালের ৩০ জুন ইন্দোনেশিয়ায় বালি দ্বীপে ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনার।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি দুই বছরের বেশি সময়ের পুরোনো। 

ছবি যাচাই ৫

Screenshot from Protidiner Bangladesh

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।

রিভার্স ইমেজ সার্চ অনুসন্ধানের মাধ্যমে থাইল্যান্ড ভিত্তিক গণমাধ্যমে ‘Thairath’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from ‘Thairath’

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ছবিটি ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার যাত্রীবাহী জাহাজ টোবা হ্রদে ডুবে যাওয়ার ঘটনার।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি ইন্দোনেশিয়ায় গত এপ্রিলে ফেরি ডুবির ঘটনার নয়।

ছবি যাচাই ৬

Screenshot from Dainik Bangla

এই ছবিটি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক বাংলা

কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।

ছবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে সৌদি ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘Al Arabia’ এর ওয়েবসাইটে ২০১৭ সালের ২০ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।

Screenshot from Al Arabia

সেখানে উল্লিখিত বিস্তারিত বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ২০১৬ সালের ০,৪ মার্চ ইন্দোনেশিয়ার বান্যুয়ানজি এলাকায় ফেরি ডুবির ঘটনার ছবি।

অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটিও সাম্প্রতিক সময়ের নয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোরর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি বরং কিছু গণমাধ্যমে ছবিগুলো সংগৃহীত এবং কোনো কোনো গণমাধ্যমে ছবির ক্যাপশনে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহীত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই ছবিগুলো ইন্দোনেশিয়ায় গত মাসে ফেরি ডুবির ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া অমূলক নয়।

মূলত, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় ফেরি ডুবির  ঘটনায় দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ইন্দোনেশিয়ায় ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় পুরোনো ছয়টি ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো ইন্দোনেশিয়ায় সাম্প্রতিক ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।

সুতরাং, ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে একাধিক পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

আরও পড়ুন

spot_img