ওবায়দুল কাদের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে বয়কট করেননি

সম্প্রতি ‘মার্কিন দূতাবাসের চাপে রাষ্ট্রপতিকে বয়কট করলেন ওবায়দুল কাদের‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে।

Screenshot: Youtube

ইউটিউবে প্রচারিত এমন একটি ভিডিও দেখুন এখানে। ভিডিওটির আর্কাইভ দেখুন এখানে

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে বয়কট করেননি বরং কোনো ধরনের তথ্যসূত্র ছাড়াই সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিউমর স্ক্যানার টিম প্রথমেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই ভিডিওটি ইউটিউবে প্রকাশ করা হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। ৮ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে  দুইজন ব্যক্তির বক্তব্য শোনান।

কি ছিল তাদের বক্তব্যে?


ভিডিওটির ১ মিনিট ৬ সেকেন্ড সময়কালে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘বাংলাদেশে এই রাষ্ট্রপতি নিয়োগের আগে বা পরে আর কোন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এত আলোচনা হয়েছে আমার জানা নেই। আগে আলোচনা হয়েছে, তবে এবার নিয়োগের পরে যে আলোচনা, অনেকের ভীমড়ি খাওয়া, অনেকের টাস্কি খাওয়া এগুলো আগে খুব একটা দেখা যেত না।’

Screenshot: Youtube

এরপর তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে ‘মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়নের কারণ নিয়ে কৌতূহল কাটছে না আওয়ামী লীগ নেতাদের‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে আলোচনা শুরু করেন৷

Screenshot: Prothom Alo

এই প্রতিবেদনটির কোথাও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের রাষ্ট্রপতিকে বয়কট বা মার্কিন দূতাবাসের চাপের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া আলোচকও তার আলোচনায় এসব বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। 

বরং প্রতিবেদনটি থেকে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেওয়ায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের বিস্ময়ের বিষয়ে জানা যায়। 

তবে এই আলোচকের আলোচনার পর উপস্থাপক বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের উপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও মন্ত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। পাশাপাশি বিষয়টিকে তিনি স্বার্থের আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেন। 

Screenshot: Youtube

পরবর্তীতে ভিডিওটির ৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডে দ্বিতীয় ব্যক্তি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বিএনপিকে গালাগালি সহ যে কর্মব্যস্ততা উনার ছিল সেটা আর থাকবে না। উনি খুব আশাবাদী হয়েছিলেন যে উনি রাষ্ট্রপতি হবেন। এখন উনি আবার আগের মতো তার মন্ত্রণালয়ে বসবেন। তার মানে হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি রাষ্ট্রপতি নামে যে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করলেন, এখন আপনার ধ্বংস মনে হয় আপনার দলের লোকেরাই করতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি পদটির কার্যকারিতা আর নেই। রাষ্ট্রপতি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি অভিভাবক। এই অভিভাবকটি হতে হয় এমন, যার মধ্যে রাজনৈতিক কোনো অন্ধত্ব নেই।’ 

এর বাইরে তিনি ওবায়দুল কাদের ও রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ওবায়দুল কাদের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে যা বলেছেন

অনুসন্ধানে মার্কিন দূতাবাসের চাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে বয়কট করেছেন এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং গণমাধ্যম সূত্রে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘মো. সাহাবুদ্দিনকে অভিনন্দন ওবায়দুল কাদেরের‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় মো. সাহাবুদ্দিনকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

Screenshot: Dhaka Post

এছাড়া একইদিনের আরেকটি গণমাধ্যম Prothom Alo এর ‘রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ‘ইয়েস উদ্দীনকে’ মনোনয়ন দেওয়া হয়নি: ওবায়দুল কাদের‘ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ইয়েস উদ্দীনকে মনোনয়ন দেয়নি। এমন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার গোটা জীবনটাই বর্ণাঢ্য।’

Screenshot: Prothom Alo

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ওবায়দুল কাদের কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি।

মূলত, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের এই বিষয়টিকে নিয়েই সম্প্রতি ইউটিউবে প্রচার করা হচ্ছে যে, মার্কিন দূতাবাসের চাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাংলাদেশের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে বয়কট করেছেন। তবে অনুসন্ধানে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া অনুসন্ধানে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে সরকার কিংবা আওয়ামী লীগকে মার্কিন দূতাবাসের চাপের বিষয়েও কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি আরও দেখা যায়, রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে গণমাধ্যমেও বক্তব্য দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সুতরাং, মার্কিন দূতাবাসের চাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিনকে বয়কট করেছেন দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।

তথ্যসূত্র

RS Team
Rumor Scanner Fact-Check Team
- Advertisment -spot_img
spot_img
spot_img