সম্প্রতি, “বিশ্ব নবীর চাঁদ দুইভাগ করার রহস্য প্রমাণ করল আধুনিক বিজ্ঞান! সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ” শীর্ষক শিরোনামে নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন দাবিতে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমনকিছু পোস্ট দেখুন এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ), এখানে(আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, নাসার বিজ্ঞারা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাননি বরং কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়া নাসাকে উদ্ধৃত করে উক্ত ভুয়া তথ্যটি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে Scientific and Academic Publishing নামের একটি জার্নালে “The Evidence of the Split of the Moon” শীর্ষক শিরোনামের একটি গবেষণাপত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব অনুসারে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ওয়েবসাইটে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞানী ব্র্যাড বেইলির একটি বিবৃতি খুঁজে পাওয়া যায়।
চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ইন্টারনেটে পড়া সবকিছুই বিশ্বাস করতে নিরুৎসাহিত করছি। পিয়ার-রিভিউড জার্নাল বৈজ্ঞানিক তথ্যের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস। বর্তমানের কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অতীতে চাঁদের দুই বা ততোধিক ভাগে খণ্ডিত হয়ে যাওয়া এবং পুনরায় একত্র হওয়ার তথ্যকে সমর্থন করে না।
ছবি যাচাই
দ্বিখণ্ডিত চাঁদের দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ছবির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ওয়েবসাইটে ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর প্রকাশিত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ছবির সাথে আলোচিত ছবিটির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ছবিটি চাঁদের বুকে অবস্থিত Ariadaeus Rille নামক দীর্ঘকায় খাদের ছবি। ছবিটি ১৯৬৯ সালের মে মাসে অ্যাপোলো-১০ মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা ধারণ করেন।
আলোচিত দাবির বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এর AFP এর ফ্যাক্টচেক বিভাগ ২০২০ সালের ১০ মে “Social media posts falsely claim the Moon ‘was once split in two’” শীর্ষক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার প্রমাণ পাননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে যে ছবিটি প্রচার করা হয়েছে সেটি চাঁদের বুকে অবস্থিত Rima Ariadaeus নামক একটি দীর্ঘ খাদের ছবি। ছবিটি ১৯৬৯ সালের মে মাসে অ্যাপোলো-১০ মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা ধারণ করেন। চাঁদের বুকে অবস্থিত দীর্ঘ এই খাদটি টেকটোনিক প্লেটের স্থান পরিবর্তনের কারণেই সৃষ্ট। এর সাথে চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।
মূলত, ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো-১০ মহাকাশযানের মহাকাশচারীরা চাঁদের বুকে একটি দীর্ঘকায় খাদের ছবি ধারণ করেন। অ্যাপোলো মিশনের মহাকাশচারীদের ধারণকৃত সে ছবি ব্যবহার করে বিগত কয়েকবছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা বিশ্বনবীর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার প্রমাণ পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে। তবে, নাসার দায়িত্বশীল একজন বিজ্ঞানী নিশ্চিত করেছেন যে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব অনুসারে চাঁদের দ্বিখণ্ডিত হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
উল্লেখ্য, পূর্বে চন্দ্রযান-৩ এর তোলা ছবি দাবিতে এআই জেনারেটেড ছবি প্রচার করা হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
সুতরাং, নাসার বিজ্ঞানীরা বিশ্বনবীর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার প্রমাণ পেয়েছেন দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- AFP: “Social media posts falsely claim the Moon ‘was once split in two’”
- Scientific and Academic Publishing: “The Evidence of the Split of the Moon”
- NASA: “Evidence of the moon having been split in two”