সম্প্রতি যশোরের বেনাপোলের পুটখালি সীমান্ত এলাকা হতে একটি চিতা বাঘ উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে একটি তথ্য দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে। আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকা হতে উদ্ধারকৃত প্রাণীটি চিতা বাঘ ছিল না বরং এটি একটি মেছোবিড়াল।
গত ২০ জুন দেশীয় মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘এন টিভি’ এর অনলাইন সংস্করণে ‘পুটখালী সীমান্ত থেকে চিতা বাঘ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত সংবাদের বিস্তারিত অংশে দাবি করা হয়- ‘বেনাপোলের পুটখালী সীমান্ত এলাকা থেকে আজ সোমবার বেলা ১২টার দিকে একটি চিতা বাঘ উদ্ধার করেছে শার্শা উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা।’

একই দিনে মূলধারার জাতীয় দৈনিক ‘যায়যায়দিন’ তাদের ওয়েবসাইট ‘বেনাপোল পুটখালী সীমান্ত থেকে চিতা বাঘ উদ্ধার’ শীর্ষক শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটিতে তারা জানায়, ‘ভারত থেকে ইছামতী নদী পার হয়ে আসা একটি চিতা বাঘ বেনাপোল সীমান্ত থেকে উদ্ধার করেছে শার্শা উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা।’

এছাড়াও দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম চ্যানেল২৪, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, নয়াদিগন্ত, এস এ টিভি, সারা বাংলা, আলোকিত বাংলাদেশ, বার্তা বাজার ও ঢাকা প্রকাশ সহ বেশকিছু ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালে বেনাপোলের পটুখালী সীমান্ত হতে চিতা বাঘ উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়।
গুজবের সূত্রপাত
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০ জুন ভারতের ইছামতি নদী পার হয়ে একটি মেছো বিড়াল যশোর বেনাপোলের পুটখালি সীমান্ত এলাকার লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। ঐ মেছো বিড়ালটিকে চিতা বাঘ ভেবে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের ধাওয়ায় প্রাণ রক্ষার্থে প্রাণীটি একটি গাছে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়দের চিতাবাঘ দাবির গুঞ্জনকে সূত্র ধরেই বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় চিতাবাঘ উদ্ধারের সংবাদ গণমাধ্যম উঠে আসে।

প্রাণীটির লোকালয়ে আগমন পরবর্তী সময়ে স্থানীয়রা বন বিভাগকে খবর দিলে বন্য প্রাণী বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে প্রাণীটিকে উদ্ধার করে এবং প্রাণীটিকে মেছো বিড়াল হিসেবে চিহ্নিত করে।
উক্ত বিষয় সম্পর্কে শার্শা উপজেলা বন্য প্রাণী বিভাগের জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে জানান, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় এটা মেছো বিড়াল। অনেক বয়স হওয়ায় এটা চিতা বাঘের মতো মনে হয়েছে এলাকার লোকজনের। আসলে এটা মেছো বিড়াল। সে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে একটি বাগানে অবমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রাণী মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।’
মূলত, সম্প্রতি যশোর বেনাপোলের পুটখালি সীমান্ত এলাকার লোকালয়ে একটি মেছো বিড়ালের আগমনকে কেন্দ্র করে উক্ত প্রাণীটিকে চিতা বাঘ ভেবে জনসাধারণের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে উক্ত ঘটনাকেই যথাযথ যাচাই না করে মেছো বিড়ালকে চিতা বাঘ দাবি করে দেশীয় মূলধারার বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে।
উল্লেখ্য, মেছো বিড়ালের ইংরেজি নাম Fishing Cat। এটি মেছো বাঘ বা বাঘরোল নামেও পরিচিত। এটি বিড়াল গোত্রীয় একধরণের স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা সাধারণত নদীর ধারে এবং জলভূমিতে বসবাস করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী তাই এ ধরণের জলজ পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। গায়ে গোল ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকায় এদেরকে চিতাবাঘ বলেও ভুল প্রচার হয়।
বেনাপোলের ঘটনার আগেও গত ০৩ জুন মানিকগঞ্জের ঘিওরে ফসলি জমি থেকে একটি মোছো বিড়াল ধরেন স্থানীয় জনতা। এ ঘটনায় এলাকায় বাঘ ধরা পড়েছে বলে প্রচার হলে লাঠিসোটা নিয়ে একত্রিত হয় স্থানীয়রা। পরবর্তীতে বন্য প্রাণী বিভাগের কর্মকর্তারা এটিকে উদ্ধার করে এবং মেছো বিড়াল হিসেবে চিহ্নিত করে।
সুতরাং, যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকার লোকালয় হতে চিতাবাঘ উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে দেশীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
বাংলাদেশ প্রতিদিন- বেনাপোলের লোকালয়ে মেছো বাঘ | Online Version
বৈশাখী টিভি- বাঘের আতঙ্ক ছড়ালো মেছো বিড়াল | Boishakhi Online
কালেরকণ্ঠ- ‘চিতা বাঘের’ আতঙ্ক ছড়াল মেছো বিড়াল | 1157243 | কালের কণ্ঠ
জাগোনিউজ২৪- https://www.jagonews24.com/amp/771594
Poultrydoctorsbd- মেছোবাঘ, বাঘরোল বা মেছো বিড়াল পরিচিতি – Poultry Doctors BD
যমুনা টিভি- বাঘ মনে করে আহত মেছো বিড়ালকে ধরলো গ্রামবাসী