সম্প্রতি, নিউজিল্যান্ডে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় বাংলাদেশের কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দুইটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখুন ডেইলি বাংলাদেশ, মানবকণ্ঠ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি), সংবাদ প্রকাশ।
উক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে ছড়িয়ে পড়া কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিউজিল্যান্ডে সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সাথে প্রচারিত ছবিগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত জানুয়ারি মাসের দেশটির বন্যার পুরোনো ছবিকে নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
ছবি যাচাই ১
নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে ডেইলি বাংলাদেশ, মানবকণ্ঠ, ডেইলি বাংলাদেশ (ইংরেজি)।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম BBC এর ওয়েবসাইটে গত ৩০ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। নিউজিল্যান্ডে সে সময়ের বন্যার ঘটনার এই ছবিটি তুলেছেন রয়টার্সের জন্য তুলেছিলেন MONTECHRISTONZ।
পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধান করে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা Reuters এর ওয়েবসাইটে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে ছবিটি তোলা হয়েছিল।
অর্থাৎ, গণমাধ্যমে প্রচারিত এই ছবিটি নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার নয়।
ছবি যাচাই ২
নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বিষয়ে জানিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ছবিটি ব্যবহার করেছে সংবাদ প্রকাশ।
কিন্তু ছবিটি উক্ত ঘটনার নয়।
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, টুইটারে BBC এর অ্যাকাউন্টে গত ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এক টুইটে নিউজিল্যান্ডের সেসময়ের বন্যার বিষয়ক একটি সংবাদের শেয়ারকৃত লিংকের ফিচারে আলোচিত ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
লিংকে প্রবেশ করে উক্ত ছবিটি না পাওয়া গেলেও বিবিসির সেসময়ের একই ঘটনার আরও একটি সংবাদের ফিচারেও একই ছবি ব্যবহার করা হয় যা থেকে প্রতীয়মান হয়, ছবিটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরোনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। বরং কিছু গণমাধ্যম ছবিগুলো সংগৃহিত বলে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যম ছবির ক্যাপশনে কিছুই লিখে নি। সাম্প্রতিক ঘটনার বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছবিগুলো ব্যবহার করে সংগৃহিত উল্লেখ কিংবা কোনো তথ্যই উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়। এতে করে নেটিজেনদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া অমূলক নয়।
মূলত, সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার ঘটনায় দেশীয় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে নিউজিল্যান্ডের ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ছবি ব্যবহার করে দেশটির সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার ছবি দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিবেদনগুলোতে আলোচিত ছবিগুলোর ক্যাপশনে ফাইল ফটো বা পুরনো ঘটনার ছবি শীর্ষক কোনো তথ্যও দেওয়া হয়নি। এতে করে স্বাভাবিকভাবে ছবিগুলো নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ঘটনার বলে প্রতীয়মান হয়, যা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একাধিক ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের বন্যার ঘটনায় কতিপয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে পুরোনো ঘটনার ছবিকে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।