তুরস্কে সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্পের ঘটনায় ফেসবুকে এক শিশুর ছবি পোস্ট করে শিশুটি ভূমিকম্পে পরিবার হারিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
কিছু পোস্টে শিশুটি পরিবার হারিয়েছে শীর্ষক তথ্য দেওয়া না হলেও তুরস্কের ভূমিকম্প কেন্দ্রিক আলোচনায় উক্ত ছবিটিও যুক্ত করা হয়েছে।
এমন কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
পোস্টগুলোর আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এখানে এবং এখানে।
বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ছবিটিকে তুরস্কের ভূমিকম্প কেন্দ্রিক ছবি দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে।
এমন কিছু পোস্ট দেখুন ভারত, পাকিস্তান, সুইজারল্যান্ড এবং কানাডা।
একই দাবিতে টিকটকের কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পরিবারহারা শিশু দাবিতে প্রচারিত ছবিটি তুরস্কের ভূমিকম্পের ঘটনার নয় বরং এটি একটি স্টক ছবি যা ২০১৮ সালে ইউক্রেনে তোলা হয়েছিল।
গত ০৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ তুরস্ক এবং উত্তর সিরিয়ায় বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর খবর আসে গণমাধ্যমে। সেদিন ভোররাতে গাজিয়ানটেপের কাছে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
স্থানীয় সময় প্রায় বেলা দেড়টার দিকে আরও একটি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন যে এটি ‘আফটারশক’ ছিল না। তুরস্কের সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্পের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে এক শিশুর ছবি পোস্ট করে শিশুটি ভূমিকম্পে পরিবার হারিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে স্টক ছবির ওয়েবসাইট ‘Shutter Stock’ এ ‘boy crying among the ruins‘ শীর্ষক শিরোনামে একই ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।
ছবিটি কবে তোলা সে বিষয়ে উক্ত ওয়েবসাইট থেকে না জানা গেলেও ছবিটি শাটার স্টকে ‘Zapylaieva Hanna’ নামক এক নারী আপলোড করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ‘Zapylaieva Hanna’ এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ০৭ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়।
হান্না লিখেছেন, “গতকাল (৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে এই ছবিটি ভাইরাল হচ্ছে।”
হান্না আলোচিত ছবিটি পোস্ট করে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে আমার স্বামী, লেভা এবং আমি গোলোসিভস্কি পার্কে (ইউক্রেনে অবস্থিত) হাঁটতে গিয়েছিলাম। সেই মুহূর্তে থেকে আমি প্রতিদিন ফটো ব্যাঙ্কে বিক্রির জন্য একটি ক্যামেরা দিয়ে কিছু না কিছু ছবি তুলছিলাম। পার্কের কাছে একটি পুরানো ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিং ছিল। পরিত্যক্ত ভবন সবসময় আকর্ষণীয় হয়। ভাবলাম এমন কিছু ছবি তুলবো যা জীবনের আনন্দ ছাড়া অন্য কিছুও প্রকাশ করতে পারে। যুদ্ধ, ভূমিকম্পের মত…। আমরা একটি ছোট সিরিজ শট করেছি, আমি এডোবি এবং শাটারস্টকে সেগুলো যোগ করেছিলাম।”
অর্থাৎ, আলোচিত ছবিটি তুরস্কের ভূমিকম্পের ঘটনার নয় বরং ছবিটি ২০১৮ সালে স্টক ফটোর জন্য ইউক্রেনে তোলা হয়েছিল।
মূলত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকে এক শিশুর ছবি পোস্ট করে শিশুটি ভূমিকম্পে পরিবার হারিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রচারিত ছবিটি তুরস্কের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনার নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি স্টক ছবি, যা ২০১৮ সালে ইউক্রেনে শিশুটির মা-ই তুলেছিলেন।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক-সিরিয়ার ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, ২০১৮ সালে ইউক্রেনে তোলা এক শিশুর ফটোশুটের স্টক ছবিকে সাম্প্রতিক সময়ের তুরস্কের ভূমিকম্পের ঘটনায় শিশুটি ভূমিকম্পে পরিবার হারিয়েছেন দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Shutter Stock: boy crying among the ruins
- Zapylaieva Hanna: Facebook Post